২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামোফোবিয়া ও ধর্মীয় বৈষম্যের সংস্কৃতি এবং ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়নের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরল প্রামাণ্যচিত্র 'প্রজেক্ট ঊনমানুষ'।
২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের একটানা সাড়ে ১৫ বছরের শেখ হাসিনা সরকারের দুঃশাসনের সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে বাংলাদেশে ইসলামোফোবিয়া বা ধর্মবিদ্বেষমূলক এক ভয়াবহ সংস্কৃতি তৈরি করা হয়। মুক্তচিন্তা ও মত প্রকাশের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা শিক্ষার্থীদের হেয় করা, কখনও জঙ্গি আখ্যা দেওয়া এবং প্রশাসনিকভাবে বৈষম্য করার এক ভয়াল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। অনলাইন গণমাধ্যম 'দ্যা ঢাকা ডায়েরি' সম্প্রতি 'প্রজেক্ট ঊনমানুষ' শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রামাণ্যচিত্রে এই দমন-নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেছে।
প্রামাণ্যচিত্রে উঠে আসে, সরকারদলীয় ছাত্রলীগের মাধ্যমে হল দখল, সিট বাণিজ্য, গুম, খুন, ধর্ষণ ও নির্যাতনের পাশাপাশি ধর্ম চর্চাকারীদের প্রতি চরম বৈষম্য করা হয়। বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিনা তামান্না তার পোশাক নিয়ে শিক্ষকের অশালীন মন্তব্য এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শরিফ ওসমান হাদি দাড়ি-টুপির কারণে 'হেফাজত' নামে ডাকার অভিজ্ঞতার কথা জানান। সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও আওয়ামীপন্থী শিক্ষক নেতা ড. জিনাত হুদা নিকাব পরা শিক্ষার্থীদের 'চিহ্নিত' করে রাখতেন এবং অন্য এক শিক্ষক বোরকাকে 'নাইট ড্রেস' হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, পরীক্ষার সময় হিজাব-নিকাব পরা ছাত্রীদের প্রশ্নপত্র না দেওয়া, হল থেকে বের করে দেওয়া এবং ভাইভা বোর্ডে পোশাক নিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী ধর্মীয় পোশাকের কারণে ফলাফলেও বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন। হলজীবনে নামাজ ও ইসলামি অনুশাসন পালনের কারণে শিবির কর্মী শাহ রিয়াদকে রাতভর নির্যাতনের পর হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আবু বকরও দাড়ি ও টুপি রাখায় 'শিবির' ট্যাগ পান এবং ভয়ে হলে উঠতে পারেননি।
ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হামলা ও প্রশাসনিক বাধার ঘটনাও ছিল নিয়মিত। রমজান মাসে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের আয়োজিত 'প্রোডাক্টিভ রমাদান' আলোচনায় ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালায়। বটতলায় কুরআন তেলাওয়াত অনুষ্ঠানের পর শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন তৎকালীন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আব্দুল বাছির। শেখ হাসিনার নির্দেশে শাবিপ্রবি ও নোবিপ্রবিতে ইফতার অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণইফতার ঠেকানোর চেষ্টা ও হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও গবেষণার ক্ষেত্রেও মাদরাসা-পটভূমির শিক্ষকদের প্রতি বৈষম্য চলত। লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেহরিন আমীন ভূইয়া মন্তব্য করেন, "গত ১৫ বছর আওয়ামী সরকার ধর্মকে দুর্বৃত্তায়ন করেছে।" ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক মডারেটর মাহাদী হাসান জানান, দাড়ি ও টুপি থাকার কারণে ছাত্রলীগ তাকে ছাত্র থাকাকালীন প্রার্থী হতে দেয়নি এবং পরবর্তীতে সমালোচনার কারণে তাকে মডারেটর পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।
তবে পরিবর্তনের আশার কথা জানিয়ে অধ্যাপক শেহরিন আমীন ভূইয়া বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনের পর এখন এই পরিবেশে পরিবর্তন শুরু হয়েছে।’ ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, ইসলামী পোশাক বা ধর্মীয় চর্চার কারণে শিক্ষার্থীদের ওপর যে বৈষম্য ও নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা শুধু ধর্মীয় স্বাধীনতার নয়, মানবাধিকারের মৌলিক লঙ্ঘন; এই নির্মম ইতিহাস পরিবর্তনের সময় এখন।
 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			