- 0
- 0
চন্ডীদাস ও রজকিনীর অমর প্রেম কাহিনী

চন্ডীদাস আর রজকিনী- তারাই প্রেমের শিরোমণি, বার বছর বড়শী বাইল তবু আধার গিলল না আবহমান কাল ধরেই এই প্রেমগীত বাংলার নাটক, সিনেমা, যাত্রাপালা তথা হাটে, মাঠে, ঘাটে এক চির পরিচিত সুর। নিতান্ত শৈশব থেকেই এটা শুনে আসছি। এটাকে প্রচলিত লোকগাঁথা হিসেবেও অনেকে মনে করেন। আবার অনেকে মনে করেন চণ্ডীদাস ও রজকিনীর প্রেমকাহিনী কোনো কিংবদন্তি নয়, এটি একটি সত্য ঘটনা। আর এই সত্য জানার জন্যই মাগুরা সদর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণে শালিখা উপজেলার শতখালি ইউনিয়নের ধোপাখালী গ্রামে যাই। চণ্ডীদাস- রজকিনীর স্মৃতিঘেরা ধোপাখালী গ্রামটা পাখ-পাখালির ডাকে ছায়া সুনিবিড় সত্যিকারের বাংলার গ্রাম।সেখানে কথা হয় চণ্ডীদাসের পরিবারের ১৬তম অধঃস্তন পুরুষ দাবিদার অমর দাসের সঙ্গে।
তিনি জানান, ১৪ শতকের শেষ ভাগের দিকের ঘটনা। চণ্ডীদাসের বাবা ছিলেন এ এলাকার একজন ছোটখাটো ব্রাহ্মণ জমিদার আর রজকিনী ছিল ধোপার মেয়ে। ধোপা বাড়ির অপরূপা, সুদর্শনা রজকিনীকে দেখে চণ্ডীদাস জাতপাত ভুলে তার প্রেমে পড়ে যায়। তাদের দুজনের বাড়ির মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে নদী। রজকিনী ওপারের ঘাটে কাপড় ধুতে আসলে চণ্ডীদাস মাছ ধরার ছলে বড়শি নিয়ে এপারে বসে তার রূপ লাবন্যে ডুবে যেত। এভাবে দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। শুধু দুচোখ ভোরে দেখতে দেখতেই চলে যায় বছরের পর বছর। কিন্তু মনের কথাটি আর বলা হয়না। এভাবে চলতে থাকে ১২ বছর। ১২ বছর পর একদিন রজকিনী চণ্ডীদাসকে জিজ্ঞেস করে, বড়শীতে কি মাছ ধরলা ?
চণ্ডীদাস বলে, ১২ বছর পর এই মাত্র টোকা দিল। দু’জনের এই প্রথম কথোপকথন। তারপর শুরু হয় প্রেম, অভিসার। কানে কানে কথা অনেকদূর গড়ায়। চন্ডীদাস ব্রাহ্মণ জমিদার পুত্র আর রজকিনী ছোটজাত ধোপার মেয়ে। সমাজ তাদের এ প্রেম মেনে নেয় না। নানা অপবাদে জর্জরিত হয়ে প্রেমিক-প্রেমিকা একদিন সব ছেড়ে পালিয়ে যায় ভারতের বাকুড়া জেলার ছাতনা গ্রামে। সেখানে তাদের বিয়ে হয়।
কিন্তু জমিদারের লম্বা হাত সেখানেও প্রসারিত হতে পারে সেই ভয়ে তারা সেখান থেকে বৃন্দাবন চলে যান। তারপর সুদীর্ঘকাল তাদের কোনো খোঁজ আর পাওয়া যায়নি। এভাবেই শেষ হয় চন্ডীদাস ও রজকিনীর অমর প্রেম।
প্রেমিক প্রেমিকার পবিত্র মনের ভালোবাসার বন্ধন যে কেমন হতে পারে তা এরা শিখিয়ে গেছেন। তাদের প্রেমের সাক্ষী হয়ে থাকা শীর্ণকায় নদীটি এখনও বেঁচে আছে অনাগত কালের মানুষকে চন্ডীদাস ও রজকিনীর অমর প্রেমকে মনে করিয়ে দিতে। এই ঘটনাটি মাগুরা জনপদের একথা মানুষ জানতে পেরেছে মাত্র কয়েক বছর পূর্বে।
তখন থেকেই এই জনপদ মানুষের আগ্রহের বস্তুতে পরিণত হয়। বর্তমানে প্রতিদিন শতশত মানুষ ধোপাখালীতে আসে চণ্ডীদাস ও রজকিনীর প্রীতিময় এই প্রেমকাননে স্মৃতি রোমন্থন করতে।। কিন্তু নদীর দু’পারে কোন স্মৃতি চিহ্ন নেই।
প্রশাসনের নিকট এলাকাবাসীর দাবী, চন্ডীদাস ও রজকিনীর ঐতিহাসিক ঘাটে স্মৃতি স্মারক নির্মাণ করা হোক।