রৌমারী-রাজিবপুরে রেলপথ এখন সময়ের অপেক্ষা
ভারতের মেঘালয় ও আসামের গারো পাহাড়ের সীমান্তবর্তী দুটি উপজেলা রৌমারী,রাজিবপুর। প্রায় ২ লক্ষ ৭৭ হাজার ২৫৬ জন মানুষের বসবাস (আদমশুমারী ২০১১ অনুযায়ী) এই দুই উপজেলার পূর্বে ভারত ও পশ্চিমে চিলমারী উপজেলার হাজার হাজার মানুষের নিয়মিত যাতায়াত এই দুই উপজেলায়।
দুই উপজেলায় মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রাণের দাবি, রৌমারী দাঁতভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ সংযোগ। স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই এই এলাকার মানুষ রৌমারী পর্যন্ত রেল লাইন সংযোগের দাবি জানিয়ে আসলেও তখন কার পাকিস্তানি শাসকগোষ্টি জনগনের এই দাবি আমলে নেয়নি। স্বাধীনতার পরবর্তী ৫১ বছর পেরোলেও আজ পর্যন্ত এই দুই উপজেলায় রেল লাইন সম্প্রসারণের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। রৌমারী রাজিবপুর দুই উপজেলা অর্থনৈতিক ভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা, হিন্দু মুসলিম, অধ্যুষিত এই দুই এলাকা, একটি এলসি পোর্ট ও একটি বর্ডার হাট রয়েছে, এবং অসংখ্য চর এলাকা রয়েছে, প্রতিদিন দেশী-বিদেশী হাজারো পর্যটকের আগমন ঘটে এই এলাকায়।
রৌমারী, রাজিবপুর বাসীর প্রাণের দাবি। রৌমারী থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে দেওয়ানগঞ্জ বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত ব্রিটিশ আমলের রেল যোগাযোগ রয়েছে, এই ৪০ কিলোমিটার রাস্তা রেল লাইন সংযোগ সম্প্রসারণ করা হলে পাল্টে যাবে রৌমারী,রাজিবপুর উপজেলা সহ পার্শবর্তী চিলমারী এবং উত্তর অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষের আর্থ সামাজিক জীবন মান।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রেলের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে,যা অব্যাহত আছে। রৌমারী পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার রেল লাইন সম্প্রসারন করা হলে, এই অঞ্চলের কৃষি পণ্য, পাথর, বালু, বনজ সম্পদ সহ রৌমারী স্থলবন্দর দিয়ে আমদানীকৃত মালামাল পরিবহনে যুগান্তকারী সুযোগ সৃস্টি হবে।
অপরদিকে দেশ বিদেশ থেকে আগত পর্যটকদের আগমন হবে সহজ নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। প্রতি বছর সরকার পাবে মোটা অংকের রাজস্ব। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে,তার সাথে অংশীদার হতে এই এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছে। বর্তমান সরকার বাস্তবমুখী উন্নয়নে বিশ্বাসী বলেই, এই এলাকার সকল স্থরের জনপ্রতিনিধি সহ সকল শ্রেনী পেশার মানুষের প্রত্যাশা, রৌমারী পর্যন্ত রেল লাইন সংযোগ স্থাপন করে তাদের দাবিটি বাস্তবে রুপ দিবেন।
এই দুই উপজেলা খাদ্য উবৃত্ত উপজেলা হিসাবে খ্যাত, প্রতি বছর আমন ও ইরি-বোরো,গম মৌসুমে হাজার হাজার টন খাদ্য শষ্য দেশের অভ্যন্ত্ররে প্রেরণ করা হয়। এ ছাড়া রৌমারী স্থল বন্দর হয়ে আসা পাথর বহুতল ইমারত সহ ব্রীজ কালবার্ট নির্মানে উৎকৃষ্ট কাঁচামাল, এ ছাড়াও এই এলাকার চাষ হওয়া সোনালী আশ পাট অর্থনৈতিক ভাবে এই এলাকাকে করেছে সমৃদ্ধ। জাতীয় নিরাপত্তার জন্যেও এই এলাকা অনেক গুরুত্বপুর্ন।এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ৬৫ হাজারের মত মুক্তিযোদ্ধা এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পরে,যা মুক্তাঅঞ্চল নামেও খ্যাত, সীমান্তের অপর প্রান্তে ভারতের মেঘালয় ও আসাম প্রদেশ। রৌমারী, রাজিবপুরের সাথে দেশের অন্যান্য এলাকার যোগাযোগ এমন পর্যায়ে রয়েছে যে তার বর্ণনা করা কঠিন।
এ বিষয়ে রৌমারী-রাজিবপুর উপজেলার স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ দিন ধরেই আমরা দাবি জানাচ্ছি রৌমারী দাঁতভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনের জন্য। এই অঞ্চলে রেলপথ স্থাপন হলে আমাদের কষ্ট অনেক অংশেই লাঘব হবে। বর্তমানে প্রায় ৪০ কি .মি. এর বেশি পথ ঘুরে দেওয়ানগনঞ্জ গিয়ে রেল গাড়ি ধরতে হয়।
বর্ষাকালে অনেক সময় রাস্তা খারাপ থাকায় রেলগাড়ি ধরতে পারি না। আমরা রৌমারী,রাজিবপুর বাসী সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি রৌমারী পর্যন্ত দ্রুত রেলপথ স্থাপনের জন্য। এতে করে অত্য অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।