ইউক্রেনের মহানায়ক " জেলেনস্কি " !
ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তম রাষ্ট্র ইউক্রেন। রাজধানী কিয়েভের আকাশে বারুদ আর মিশাইলের গন্ধে ভরপুর। পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে কেউ পাশে নেই। একাই লড়ছে ইউক্রেন আর তাদের জনগণ। পারমাণবিক শক্তি ও অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র সমৃদ্ধ ইউক্রেন রাশিয়ার থেকেও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত ছিলো। ১৯৯৪ সালে রাশিয়া - ইউক্রেন মারণাস্ত্র সমঝোতা হয়। সেই চুক্তিতে শর্ত ছিলো তারা বহিঃশক্তির হাত থেকে রক্ষা করবে। বাস্তবতায়, সে চুক্তি ভংগ করে - বিশ্বাসঘাতকতার আশ্রয় নিয়ে ইউক্রেনের নিরীহ নাগরিকদের বিরুদ্ধে রাশিয়া নগ্নভাবে হামলা চালায় ।
ইউক্রেনের সাহসী বীর ভলোদেমির জেলেনস্কি। একজন কমেডিয়ান অভিনেতার বিশাল খ্যাতি থেকে জনগণের আস্হাভাজন নেতা হয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন।
রুশ হামলার পয়লা নম্বর টার্গেট ভলোদেমির জেলেনস্কি। তিনি ভিডিও বার্তায় আশংকা করছেন " শত্রুদের হিটলিস্টে তিনি এবং তাঁর পরিবারের উপরও হামলা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে "।
রাজধানী কিয়েভেই রয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। জেলেনস্কি সাহসিকতার সাথেই বলেছেন '' আমি কিয়েভেই থাকব। আমার পরিবারও এখানেই রয়েছে।'' গোটা বিশ্ব এই মুহূর্তে লৌহকঠিন জেলেনস্কি দেশের একজন সেনাপতি হয়েই যুদ্ধ পরিচালনা করছেন ।
২০১৯ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই করেছিলেন ৪৪ বছরের জেলেনস্কি। বিপুল জনসমর্থন নিয়ে রাষ্ট্রপতি পদে বসেছিলেন।
তিনি যে কমেডি শো-এর জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, সেখানেও প্রেসিডেন্টের চরিত্রেই অভিনয় করেন জেলেনস্কি। 'সার্ভেন্ট অফ দ্য পিপল' টেলিভিশন শো-তে তিনি ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। তারপর ২০১৮ সালে ইউক্রেনের জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন দেশের জনগণের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ।
জেলেনস্কি এখন যুদ্ধকবলিত দেশের প্রেসিডেন্টের ভূমিকায়। মিলিটারি পোশাকে জেলেনস্কি পৌঁছে গিয়েছিলেন ওয়ারজোনে। তিনি ইউক্রেনের সেনাকে পেপটকও দিয়ে এসেছেন। মিলিটারি পোষাকে জেলেনস্কির সেই ছবি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।
ইউক্রেনের ক্রিভি শহরে জন্মগ্রহণ করা জেলেনস্কি নিজের দেশের ভাষা শেখার আগেই রপ্ত করে ফেলেছিলেন রুশ ভাষা। দেশে হামলা হতেই - সেই রুশ ভাষাতেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন - ''এই সেই ডনবাস, যেখানে ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা দেখেছি। শেরভাকভ পার্কে বন্ধুদের সঙ্গে মদ্যপান করেছি। এই সেই লুহানসক, যেখানে আমার প্রিয় বন্ধুর মাকে কবর দিয়েছি। এ অঞ্চলে বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
জেলেনস্কি জনগনকে সাথে নিয়ে এই যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। দেশপ্রেমী জনগনকে অস্ত্র হাতে নিয়ে মাতৃভূমির শত্রুদের মোকাবেলা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে রাজধাণী কিয়েভের ১৮০০০ হাজার নাগরিকদের মেশিনগান দিয়ে আত্মরক্ষার আহবান জানিয়েছেন। রাশিয়ার তাবত্ হুমকি ইউক্রেনবাসী মোটেও তোয়াক্কা করছেন না। তাদের এই লড়াই অস্তিত্বের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।
অভিনেতা থেকে রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে উঠা জেলেনস্কি রাশিয়ার মতো সুপার পাওয়ারের আগ্রাসন কী ভাবে মোকাবেলা করবেন। সেদিকেই গোটা বিশ্ব অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রয়েছে।