Sarawashati Puja: সরস্বতী পূজায় সেরা বাহুবলের "মৌড়ী" ।
"নমো সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে।।
জয় জয় দেবী চরাচর সারে,কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে। বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।" পরমেশ্বরের জ্ঞানময় নারী মূর্তি হচ্ছেন মা সরস্বতী। বেদ,বেদান্ত,পুরাণ শাস্ত্র ও রামায়ণে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে তাতে স্পষ্ট যে মা সরস্বতী হচ্ছেন পরমেশ্বরের জ্ঞানময় নারী মূর্তি তথা পরমপিতা ব্রহ্মার নারী/স্ত্রী সত্ত্বা।
শ্রীপঞ্চমীর দিন অতি ভোর থেকে বৃষ্টিস্নাত পরিবেশে ও কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য বিধি মেনে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে "পারিজাত সংঘ মৌড়ী"-এর আয়োজনে শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির প্রাঙ্গণে ১৩ তম সরস্বতী পূজা উদযাপিত হয়েছে। বিদ্যাদেবীর কৃপালাভের আশায় শনিবার(০৫ ফেব্রুয়ারী) বৃহত্তর সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার ০৪ নং সদর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী মৌড়ী গ্রামের আয়োজনে মৌড়ী পারিজাত সংঘ-এর সাথে ছিলো গ্রামের শিশু-কিশোর,তরুন,যুবক,প্রবীণ সহ সর্বস্তরের সনাতন ধর্মালম্বী ভক্তরা। সকালে পূজামণ্ডপে ভক্তরা মায়ের পাদপদ্মে অঞ্জলি দেন। দেবীর সামনে ‘হাতে খড়ি’ দিয়ে ছোট শিশুদের বিদ্যাচর্চার সূচনা হয়। মণ্ডপে প্রসাদ বিতরণ সহ সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয়েছে আরতি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এবার পারিজাত সংঘের সভাপতি শ্রীযুক্ত পিযুষ চন্দ্র পাল ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে রিপন পাল পালন করেন এবং সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন সমরেশ চন্দ্র পাল (টিটু),পুলক পাল,স্বপন,পিয়াল,সন্তুষ,নিদুল,শঙ্কু, নয়ন,বিদ্যুৎ,শাওন,সুশান্ত,অনুতোষ পাল।
বাহুবলে সরস্বতী পূজার এই বিশেষ শুভক্ষণে সন্ধ্যার পর আলোকসজ্জায় শোভিত চারটি ধর্মীয় সংঘের চিত্তাকর্ষক মণ্ডপ দেখতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাম থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা।
সরেজমিনে উপজেলা ঘুরে দেখা গিয়েছে,'মৌড়ী গ্রামে মোট চারটি সংঘ শ্রী শ্রী সরস্বতী পূজা উদযাপন করছে;...(১) পারিজাত সংঘ,(২) চিরন্তন সংঘ,(৩) পার্বণ সংঘ ও (৪) রংধনু সংঘ। বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর আরাধনাকে কেন্দ্র করে বর্নিল সাজে সজ্জিত চিত্তাকর্ষক উক্ত সংঘ গুলোর পূজা মন্ডপ। চিরন্তন পূজা মন্ডপের দায়িত্বে থাকা সভাপতি হৃদয় পাল,সম্পাদক অমিক পাল ও উনাদের সহিত সহযোগিতায় ছিলেন পিঙ্কন পাল,তন্ময়,জয়,তুর্জয়,শ্রেষ্ঠ, সূর্য,পাপন,হৃদয়,রনিক, রাজন পাল।
বাহুবল উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ আজ শনিবার(০৫ ফেব্রুয়ারী) দেবী সরস্বতীর বন্দনায় ঢাকঢোল-কাঁসর,শঙ্খ ও উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে। বিভিন্ন স্কুল,কলেজ এবং ঘরে ঘরে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূজার আয়োজন হলেও সরস্বতী পূজার মূল আকর্ষণ ছিলো ০৪ নং সদর ইউনিয়নের মৌড়ী গ্রামের সরস্বতী পূজার মন্ডপগুলোতে । বাহুবলের দীননাথ ইনস্টিটিউট সাতকাপন সরকারি মডেল হাইস্কুল,আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ আরও কয়েকটি স্কুল মাঠে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। কোভিড-১৯ এর নতুন ধরন ওমিক্রন এর কারণে এবার অবশ্য সব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে পূজা উদযাপন হয়েছে।
মৌড়ী গ্রামের প্রবীণ সমাজসেবক ও বিশিষ্ট ব্যক্তি রামকুমার পাল আই নিউজ বিডি'কে বলেন,'প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও আমাদের গ্রামে সকলের সম্মিলিত সহযোগিতায় উল্লেখ্য চারটি সংঘ সহ ঘরে ঘরেও মা সরস্বতীর পূজা উদযাপিত হয়েছে।তবে করোনা মহামারী ঠেকাতে এবার স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালনের সহিত লোকসমাগম এড়াতে সেচ্ছাসেবীদের মন্ডপগুলোতে রাখা হয়েছে এবং অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে,তার জন্য গ্রামের মূল প্রবেশপথ গুলোতে নবীন-প্রবীণ মিলে পাহারায়ও বসানো হয়েছে। আগামীকাল রবিবার(০৬ ফেব্রুয়ারী) সকালে ঘট/মূর্তি বিসর্জনের মাধ্যমে পূজার শুভ সমাপ্তি ঘটবে '।
পারিজাত সংঘের সভাপতি পিযুষ চন্দ্র পাল ও সদস্য সমরেশ চন্দ্র পাল(টিটু) জানান,'পূজা উপলক্ষে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাসম্ভব মন্ডপ সাজিয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে পারিজাত সংঘ,রংধনু সংঘ,চিরন্তন সংঘ,পার্বণ সংঘের সদস্যবৃন্দ সহ মৌড়ী গ্রামের প্রবীণদের সহযোগিতায় আমরা বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান উদযাপন ও প্রসাদ বিতরণ করেছি'।
সরস্বতী পূজা উপলক্ষ্যে পুনরায় নির্বাচিত সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব আজমল হোসেন চৌধুরী আই নিউজ বিডি'কে বলেন,' সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব হলো সরস্বতী পূজা। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রী শ্রী সরস্বতী পূজা উপলক্ষ্যে আমি বাহুবল উপজেলার হিন্দু ধর্মালম্বীদের জানাই আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা। জ্ঞানালোকে উদ্ভাসিত হয়ে দেশের প্রতিটি মানুষ সাম্প্রদায়িকতা, অজ্ঞানতা,কূপমণ্ডুকতা থেকে মুক্ত হয়ে একটি কল্যাণকর ও উন্নত সমাজ গঠনে এগিয়ে আসবে-এটাই সবার প্রত্যাশা '।