উপকুলে অচাষকৃত শাকের মেলা ও রান্না প্রতিযোগিতা

Ranajit Barman avatar   
Ranajit Barman
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হয় উপকূলীয় অচাষকৃত শাকের মেলা ও রান্না প্রতিযোগিতা।..


 উপকুলে অচাষকৃত শাকের মেলা ও রান্না প্রতিযোগিতা

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ  উপকূলীয় অঞ্চলের স্থানীয় খাদ্য ভান্ডার ও অচাষকৃত উদ্ভিদ সংরক্ষণে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের ধুমঘাট আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হয় উপকূলীয় অচাষকৃত শাকের মেলা ও রান্না প্রতিযোগিতা।

সিক্সটিন ডেজ অব গ্লোবাল অ্যাকশন অন এগ্রোইকোলজি ২০২৫’ ও ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে কৃষক-কৃষানি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।

 সবুজ সংহতি ও স্থানীয় জনসংগঠন সমূহের আয়োজনে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের সহায়তায় উক্ত কর্মসূচিতে শীলতলা গ্রামের স্থানীয় পাঁচটি জনসংগঠনের ২০ জন সদস্য অংশগ্রহন করেন যার মধ্যে ১০ জন অচাষকৃত উদ্ভিদের প্রদর্শনীতে এবং বাকী ১০ জন রান্না প্রতিযোগিতায়। এই প্রদর্শনীতে ৯০ প্রজাতির উদ্ভিদ স্থান পায়। তার মধ্যে ছিলো থানকুনি, হেলাঞ্চ, শাপলা, গাদোমনি, আদাবরুন, পেপুল, ইপিলইপিল, দুর্বা, তুলশি, সেঞ্চি, বামনআটি, বিলকুমারী, কলমি, কচুশাক, নাটা, অশ্বগন্ধ্যা, শিষাকন্দা,ঘুমশাক, ডুমুর, আকম্দ, মাটিফোড়া, তিতবেগুন, নিমুখা, বৌনুটি, ধুতরা ইত্যাদি। এসময় অংশগ্রহনকারীরা এসব উদ্ভিদের গুনাগুন, প্রাপ্তিস্থান, কোন মৌসুমে পাওয়া যায়, কোনটি মানুষ ও প্রানীর খাবার এবং কিভাবে খাওয়া যায় তার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

 সবুজ সংহতির সভাপতি জিল্লর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলিম, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজীব বাছাড়, স্থানীয় ইউপি সদস্যা কমলা রানী মৃধা,  কৃষানী অল্পনা রানী, কৃষানী মিতা রানী, কৃষক চিত্তরঞ্জন, বারসিক কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ জোয়ারদার,বিশ্বজিৎ মন্ডল, মফিজুর রহমান, মিলন, বরষা রানী  প্রমুখ।
ধুমঘাট আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলিম জানান, “অংশগ্রহণকারীরা ৭০ থেকে ৮০ প্রজাতির অচাষকৃত উদ্ভিদ শনাক্ত করেছেন। স্থানীয়রা এসব উদ্ভিদের পুষ্টিগুণ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে নতুনভাবে জানতে পেরেছেন।

উপসহকারী কৃষিকর্মকর্তা রাজিব বাছাড় জানান, অচাষকৃত উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও স্থানীয় খাদ্য সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে। অংশগ্রহণকারীরা অচাষকৃত উদ্ভিদের খাদ্য ও ঔষধি গুণ সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করেছেন।
 
জিল্লুর রহমান বলেন,“এ মেলার মাধ্যমে স্থানীয় খাদ্য সম্পদ ও নারীদের ঐতিহ্যগত জ্ঞানকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। নারীরা যে খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখছে তা এই মেলার মাধ্যমে আমরা দেখতে পেলাম।


কৃষানী অল্পনা রানী মিস্ত্রি বলেন, উপকুলীয় অঞ্চল ছিলো একসময় প্রকৃতির সমাহার। এখানে চাষ করা অচাষকরা নানান শস্য ফসলে ভরা ছিলো। বর্তমানে আধুনিক কৃষি ও বাজর নির্ভর খাদ্যাভ্যাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, লবনাক্ততা বৃদ্ধি, অচাষকৃত উদ্ভিদের প্রাপ্তি স্থল বিলুপ্ত, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে এসকল প্রাণবৈচিত্র্য বিলুপ্তর পথে। আর এসকল উদ্ভিদবৈচিত্র্য সংরক্ষণ সচেতনতার প্রয়োজন।

রান্না প্রতিযোগিতায় স্থানীয় নারীরা বিভিন্ন শাক, মূল ও কন্দজাত উপাদান দিয়ে ঐতিহ্যবাহী খাবার প্রস্তুত করেন। পাঁচ সদস্যের বিচারকমন্ডলী স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও উপস্থাপনার ভিত্তিতে বিজয়ী নির্বাচন করেন।
বিজয়ীদের মধ্যে শাকের মেলায়: ১ম মালতি রানী, ২য় শিখা রানী, ৩য় পৃথা রানী। রান্না প্রতিযোগিতায়: ১ম ইতি রাণী, ২য় রিংকু রাণী, ৩য় অঞ্জলী রাণী পুরস্কার গ্রহণ করেন।

ছবি- শ্যামনগর উপকূলে গ্রামীন নারীদের অচাষকৃত শাকের রান্না প্রতিযোগিতা।

 

Keine Kommentare gefunden


News Card Generator