রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা মাহফুজের দীর্ঘ দেরিতে সাংবাদিকরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
রাজধানীতে অনুষ্ঠিত একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা মাহফুজের অস্বাভাবিক দেরি সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। আয়োজকরা অনেক আগেই অনুষ্ঠান শুরুর ঘোষণা দিলেও মাহফুজ নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হননি। প্রায় ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও অনুষ্ঠানের কোনো সুনির্দিষ্ট সূচনা হয়নি। এ অবস্থায় সংবাদ সংগ্রহে আসা সাংবাদিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে চলে যান।
সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, একজন রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা কিংবা যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির দেরি কোনোভাবেই পেশাদারিত্বের মধ্যে পড়ে না। গণমাধ্যমকর্মীরা সময়মতো খবর সংগ্রহ ও প্রচারের জন্য সর্বদা দায়বদ্ধ থাকেন। অথচ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বাধ্য হওয়া শুধু সময়ের অপচয়ই নয়, তাদের প্রতি চরম অসম্মানও বটে।
অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত একাধিক সাংবাদিক জানান, তারা সকাল থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে বারবার জানানো হচ্ছিল যে “উপদেষ্টা কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছেন।” কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও মাহফুজ আসেননি। এই দীর্ঘ অপেক্ষার পর সাংবাদিকদের একাংশ সিদ্ধান্ত নেন আর অপেক্ষা নয়, বরং অনুষ্ঠান বর্জন করে বের হয়ে যাবেন।
এ ঘটনায় সাংবাদিক সমাজে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, “মিডিয়ার সঙ্গে এ ধরনের আচরণ অগ্রহণযোগ্য।” কেউ কেউ এটিকে সাংবাদিকদের মর্যাদাহানির সামিল বলে উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে আয়োজক কমিটির কিছু সদস্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, “আমরা নিজেরাও বিব্রত হয়েছি। অনুষ্ঠানকে সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, কিন্তু উপদেষ্টা সময়মতো না আসায় পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।”
সাংবাদিকদের ক্ষোভের কারণে অনুষ্ঠানের পরিবেশ বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠে। যারা থেকে গিয়েছিলেন, তারাও হতাশা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানের মূল বিষয়বস্তু বা আলোচনার উদ্দেশ্য সম্পূর্ণভাবে আড়ালে চলে যায় এই ঘটনার কারণে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা শুধু সাংবাদিকদের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনই তৈরি করে না, বরং গণমাধ্যম ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে একধরনের অবিশ্বাসও সৃষ্টি করে। তারা মনে করেন, রাষ্ট্রীয় বা রাজনৈতিক যেকোনো পদে থাকা ব্যক্তির উচিত সময়নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখা। গণমাধ্যমকে অবমূল্যায়ন করলে এর প্রভাব শেষ পর্যন্ত নেতিবাচক ভাবেই ফিরে আসে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা ধরনের অনুষ্ঠান, সভা ও সেমিনারে একই ধরনের অভিযোগ সাংবাদিকরা করে আসছেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের দেরি, অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কারণে গণমাধ্যমকর্মীরা বারবার হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সাংবাদিক সমাজ তাই এ বিষয়ে একটি স্থায়ী সমাধান চান।
অনেক সাংবাদিক বলেছেন, আজকের এই বর্জন কোনো ব্যক্তিগত ক্ষোভ নয়, বরং পেশাদারিত্ব ও সম্মান রক্ষার অংশ। তারা আশা করছেন, ভবিষ্যতে আর কোনো অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমের সঙ্গে এভাবে অবহেলার আচরণ করা হবে না।