বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজকে সরাসরি আক্রমণ করে বলেছেন, তারা উপদেষ্টার নাম ভাঙিয়ে কোটি টাকা বানিয়েছে, এখন আবার নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইছে।
বিএনপি’র ভেতরে নেতৃত্ব, ত্যাগ আর রাজনীতিকে ঘিরে নতুন করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। বিশেষ করে দলীয় উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনায়। সম্প্রতি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাজ্য থেকে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নিয়ে নাম প্রকাশ করে দুইজন উপদেষ্টাকে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, এই উপদেষ্টারা রাজনীতি করার নামে ও দলের প্রভাব খাটিয়ে কোটি কোটি টাকা বানিয়েছেন। এখন তারা আবার আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
তারেক রহমানের এই বক্তব্যে যে নামগুলো উঠে এসেছে, তারা হলেন উপদেষ্টা মাহফুজ এবং আসিফ। দু’জনই দীর্ঘদিন ধরে দলের ভেতরে উপদেষ্টা হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু সমালোচনার ঝড় উঠেছে এ কারণে যে, তারা নাকি দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের কথা চিন্তা না করে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন ব্যবসা, নিয়োগ-বাণিজ্য, এমনকি রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে তারা অল্প সময়ের মধ্যেই বিপুল অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন।
তারেক রহমান প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন—“উপদেষ্টা হয়ে কোটি কোটি টাকা বানিয়েছো, এখন আবার সেই টাকা দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চাও? জনগণ কি এটা মেনে নেবে?” তাঁর মতে, বিএনপি এখনো এক সংকটকালীন সময় পার করছে, যেখানে জনগণ দলের দিকে তাকিয়ে আছে পরিবর্তন আর নেতৃত্বের জন্য। সেখানে যদি দলের ভেতরে সুবিধাবাদী, অর্থকেন্দ্রিক রাজনীতি চালু হয়, তাহলে বিএনপি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তারেক রহমানের এই প্রকাশ্য মন্তব্য আসলে দলের ভেতরের অসন্তোষ ও দ্বন্দ্বকে সামনে নিয়ে এসেছে। ইতিমধ্যেই তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা চলছে—আসলেই কি বিএনপি নেতৃত্বের যোগ্যতা, ত্যাগ ও সংগ্রামের ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচন করবে, নাকি অর্থশালী ও ক্ষমতাধর গোষ্ঠীরাই প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবে।
মাহফুজ ও আসিফের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে যে, তারা নাকি দলের নাম ব্যবহার করে বিদেশে ব্যবসা ও ব্যক্তিগত বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন। এমনকি বিএনপি’র বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার জন্য অর্থের লেনদেনের অভিযোগও এসেছে। যদিও তারা এ বিষয়ে এখনো প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, তারা নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে রাজনৈতিক অপপ্রচার হিসেবেই দেখছেন।
অন্যদিকে, বিএনপি নেতাদের একাংশ বলছেন, এই ধরনের প্রকাশ্য সমালোচনা আসলে দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযানেরই ইঙ্গিত দেয়। তারেক রহমান হয়তো সংকেত দিয়েছেন যে, দলের ভেতরে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন, তারাই ভবিষ্যতে নেতৃত্বের আসনে থাকবেন। সুবিধাভোগী আর অর্থলোভীরা ধীরে ধীরে বাদ পড়বেন।
এমন সময়েই বিএনপি নতুন করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে নানা প্রস্তুতি নিচ্ছে। আন্দোলন ও নির্বাচনী কৌশল—দুটো নিয়েই এখন তীব্র আলোচনা চলছে। কিন্তু উপদেষ্টা হয়ে কোটি টাকা বানানো এবং এখন প্রার্থী হতে চাওয়ার অভিযোগ দলকে যে বড় সংকটে ফেলেছে, তা নিয়ে তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত এখন তীব্র বিতর্ক চলছে।
জনগণও বিষয়টিকে কৌতূহল নিয়ে দেখছে। কারণ, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি যদি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে আগামী নির্বাচনে তারা কতটা কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে, সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে।