গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে সম্প্রতি উদ্বোধন করা হলো তিস্তা দ্বিতীয় সেতু। প্রায় এক দশকের স্বপ্ন পূরণ করে দুই জেলার মানুষকে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা এনে দিয়েছে এই সেতু। কিন্তু উদ্বোধনের মাত্র একদিনের মাথায় ঘটে গেল এক অপ্রত্যাশিত ও হতাশাজনক ঘটনা—চুরি হয়ে গেল প্রায় ৩০০ মিটার বৈদ্যুতিক ক্যাবল। ফলে সন্ধ্যার পরই সেতুর ওপর নেমে আসছে ঘুটঘুটে অন্ধকার, যা স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বিকেলে বিষয়টি ধরা পড়ে। তার আগের দিন বুধবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। কিন্তু আনন্দ আর গর্বের সেই মুহূর্ত স্থায়ী হয়নি ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে সেতুর ল্যাম্পপোস্টগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে গিয়ে দেখা যায় বাতিগুলো জ্বলছে না। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেতুর হরিপুর পয়েন্ট থেকে সংযোগ নেওয়া বৈদ্যুতিক তার কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান মিলন বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেন।
তিনি গণমাধ্যমকে জানান, “ক্যাবল চুরি হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে সেতুটি এখনও অন্ধকারে রয়েছে।”
উদ্বোধনের পরদিনই ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই তীব্র সমালোচনা করে পোস্ট দিয়েছেন। কেউ লিখেছেন, “দুঃখিত, আমরা সামান্য ক্যাবলের লোভ সামলাতে পারলাম না।” অন্য একজন লিখেছেন, “আজ ক্যাবল চুরি হলো, কাল হয়তো রডও নিয়ে যাবে!”
এলজিইডির অধীনে বাস্তবায়িত এই সেতুটি ইতোমধ্যে ‘মাওলানা ভাসানী সেতু’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৯০ মিটার এবং প্রস্থ ৯ দশমিক ৬ মিটার। সেতুটির মোট লেন সংখ্যা দুইটি এবং স্প্যান সংখ্যা ৩১টি।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওফিড) যৌথ অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৩৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়, যেখানে সংযোগ সড়ক ও নদী শাসনের কাজও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের মানুষের যাতায়াত সহজ করতে নির্মিত এই সেতু এখন পুরোপুরি আলোহীন হয়ে পড়ায় নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, এত বড় একটি স্থাপনা উদ্বোধনের আগেই যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা উচিত ছিল।
প্রশ্ন উঠছে সরকারের নজরদারি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়েও। একটি বহুল আলোচিত ও ব্যয়বহুল অবকাঠামো উদ্বোধনের মাত্র একদিন পরেই চুরি হওয়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে দেশের অবকাঠামোগত নিরাপত্তার জন্য এক বড় সতর্ক সংকেত।
এই ঘটনার পর স্থানীয়দের প্রত্যাশা—দ্রুত তদন্ত করে চোরচক্রকে শনাক্ত করা হবে এবং সেতুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। না হলে এই সেতু নিয়ে মানুষের গর্ব শঙ্কায় পরিণত হবে।