কুয়াকাটার উপকূলবাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগেই হারিয়ে গেল সাগরের বুকে। উদ্বোধনের আগেই ভেঙে গেল ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত কুয়াকাটার মেরিন ড্রাইভ সড়ক। প্রকল্পের বিভিন্ন অংশে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এটি শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়—বরং এটি কুয়াকাটার মর্যাদা ও পর্যটন সম্ভাবনায় এক চরম আঘাত।
২০২৪ সালের জুন মাসে "সাগরকন্যা" কুয়াকাটাকে নতুন রূপে সাজাতে নেয়া হয় এই প্রকল্প। ১,৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সড়ক এবং সবুজ বেষ্টনীসহ পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল কুয়াকাটা পৌরসভার। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ছিলেন সাদ্দাম মাল, বেল্লাল হোসেন ও ছগির মোল্লা। প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে গত ২৯ মে ভয়াবহ ঢেউয়ের তোড়ে ধসে পড়ে এর উল্লেখযোগ্য অংশ।
ভাঙনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে সমুদ্রের কাছের এলাকায় নির্মিত সবুজ বেষ্টনী ও সড়কের উপর। প্রকল্পটি গড়ে তোলা হয়েছিল সৌন্দর্যবর্ধন, পর্যটক আকর্ষণ এবং উপকূলীয় এলাকায় টেকসই যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্যে। কিন্তু বাস্তবায়নে ছিল অবহেলা, ঘাটতি ও পরিকল্পনার মারাত্মক ত্রুটি।
স্থানীয় বাসিন্দা মুজাহিদ ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “শুভ উদ্বোধনের আগেই সব ধসে পড়ল। কোটি কোটি টাকা খরচ করে এমন নিম্নমানের কাজ করলে এর পরিণতিও এমনই হবে।”
জনি আলমগীর নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, “এটা শুধু দুঃখজনক না, লজ্জারও বিষয়। যেভাবে কাজ হয়েছে, তাতে বোঝাই যায়—কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই প্রকল্পটা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, “লঘুচাপের ফলে সাগরের পানি বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গিয়েছিল, এতে করে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। আমরা গুরুত্বসহকারে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
তবে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ইউএনও রবিউল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে ঠিকাদারদের উদ্দেশে কড়া হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। তিনি সেখানে লেখেন, “এই রাস্তার ক্ষতিপূরণ আদায় করবো ইনশাআল্লাহ। বিল ও জামানত পৌরসভায় জমা আছে, প্রশাসক নিয়োগের পর শত তদবিরেও তা ছাড় হয়নি। যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে দায় এড়াতে পারবে না কেউ।”
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং টেকসই পরিকল্পনার অভাব নিয়ে। বিশেষ করে কুয়াকাটার মতো সম্ভাবনাময় পর্যটন শহরে বারবার এমন প্রকল্প ব্যর্থতা কেবল উন্নয়নের নামে অর্থের অপচয়কেই সামনে নিয়ে আসে।
স্থানীয়রা জোরালোভাবে দাবি তুলেছেন, দোষীদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ভবিষ্যতে এমন প্রকল্পে প্রকৌশলগত মান যাচাই ও মনিটরিং বাড়াতে হবে।