গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে উচ্চকক্ষের নির্বাচন অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে হওয়া উচিত। গোপালগঞ্জে পথসভায় তিনি পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ভেঙে নতুন কাঠামোর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর এক পথসভায় বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন পরিবর্তন আনতে হলে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন অত্যন্ত জরুরি। তার মতে, উচ্চকক্ষের নির্বাচন অবশ্যই প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতিতে হওয়া উচিত, যাতে জনগণের প্রকৃত মতামত সংসদে প্রতিফলিত হয়।
তিনি বলেন, "আমরা যদি কেবল সুবিধাবাদী রাজনীতি করতাম, তাহলে আজ শেখ হাসিনার কেবিনেটে মন্ত্রী হয়ে যেতাম, শত শত কোটি টাকার মালিক হতাম। কিন্তু আমরা সেই আপোষের রাজনীতি বেছে নেইনি। আমরা সবসময়ই জনগণের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছি এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ রাজনীতি করতে চাই।"
গত শুক্রবার (২২ আগস্ট) দুপুরে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর কলেজ বাসস্ট্যান্ডে জেলা গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নুরুল হক নুর। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে কখনোই নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। তাই নির্বাচনী কাঠামোতে পরিবর্তন এনে নতুন বন্দোবস্তের আলোচনায় যেতে হবে।
তার ভাষায়, "রাজনীতিকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। জনগণের কাছে দায়বদ্ধ করতে হবে। আর সেই দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন নতুন নির্বাচন ব্যবস্থা। আপনারাই জনগণের প্রতিনিধি, তাই আপনাদের হাত ধরেই এই পরিবর্তন ঘটাতে হবে।"
গোপালগঞ্জের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে নুরুল হক নুর বলেন, "গোপালগঞ্জ কোনোভাবেই খারাপ মানুষের জায়গা নয়। এই মাটিতে জন্মেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সাংবাদিক ও বামপন্থি নেতা নির্মল সেন, ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদার, মতুয়া সম্প্রদায়ের হরি চাঁদ ঠাকুর, জাতীয় ক্রিকেট দলের রকিবুল হাসান, সংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগম, চলচ্চিত্র পরিচালক কাজী হায়াতসহ অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী মানুষ। তাই প্রশাসনের ভাইদের বলবো, সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে মামলা দিয়ে কোনো নির্যাতন করবেন না।"
তিনি আরও বলেন, যদি বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে হয়, তবে অবশ্যই একটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন জরুরি। যেখানে উচ্চকক্ষের সদস্য নির্বাচন হবে পিআর পদ্ধতিতে এবং নিম্নকক্ষ নির্বাচিত হবে সরাসরি জনগণের ভোটে। এতে জনগণের মতামতের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটবে এবং রাজনীতির ভারসাম্য রক্ষা হবে।
এ পথসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি আল আমিন সরদার এবং সঞ্চালনা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অপু মুন্সি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান, ফরিদপুর বিভাগীয় গণঅধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফিরোজুর রহমান, উচ্চতর পরিষদের সদস্য শহিদুল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান, যুব অধিকার পরিষদের প্রচার সম্পাদক ফারুক হোসেন, গোপালগঞ্জ জেলা যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা ইব্রাহিম, জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি শেখ মোজাহিদ এবং মুকসুদপুর উপজেলা গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলি।
নুরুল হক নুরের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তিনি প্রচলিত রাজনৈতিক কাঠামোতে বিশ্বাস করেন না। তার দৃষ্টিতে, নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে জনগণকেন্দ্রিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন একটি ভিন্ন ধরনের সংসদ কাঠামো, যেখানে পিআর পদ্ধতির উচ্চকক্ষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
নুরুল হক নুরের এই বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের ধারণা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।