জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থল টুঙ্গিপাড়ায় এবার পালন হয়নি তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী। এ ঘটনায় স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বিস্ময় ও সমালোচনা শুরু হয়েছে।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় অবস্থিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থল—যেখানে প্রতি বছর তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়—সেই জায়গাতেই এবার পালন হয়নি এই ঐতিহাসিক দিনটি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের এই প্রথা ভাঙায় এলাকাবাসীসহ দেশজুড়ে বিস্ময় ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
প্রতিবছর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতে টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সেনা-বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষ সমবেত হয়ে তাঁর প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সমাধিস্থলে কোরআন খতম, মিলাদ মাহফিল, দোয়া মোনাজাত এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও স্মরণসভা হয়ে থাকে। কিন্তু এবছর এসব কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি।
স্থানীয়দের মতে, প্রশাসনের তরফ থেকে এবারের অনুষ্ঠান বাতিলের সঠিক কারণ জানানো হয়নি। কেউ কেউ ধারণা করছেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নিরাপত্তাজনিত জটিলতা বা শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশনার কারণে হয়তো এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সরকারি কোনো পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে মন্তব্য করা হয়নি।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এ ঘটনা তাঁদের জন্যও অপ্রত্যাশিত। তাঁদের ভাষ্য, বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান ও সমাধিস্থল টুঙ্গিপাড়া শুধু আওয়ামী লীগের জন্য নয়, বরং পুরো জাতির জন্য এক পবিত্র ও ঐতিহাসিক স্থান। সেখানে মৃত্যুবার্ষিকী না পালন করা মানে জাতীয় শোকের ঐতিহ্যে বড় ধরণের ভাঙন সৃষ্টি করা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ঘটনা শুধুমাত্র প্রশাসনিক অবহেলা নয়, বরং রাজনৈতিক বার্তাও বহন করতে পারে। জাতীয় শোক দিবসের মতো সংবেদনশীল দিনে এমন অনুপস্থিতি শাসক দলের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। অনেকে লিখেছেন, “যেখানে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি চিরজীবী, সেখানে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী ভুলে যাওয়া বা অবহেলা করা অগ্রহণযোগ্য।” কেউ কেউ সরাসরি দায় চাপাচ্ছেন রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর।
টুঙ্গিপাড়ার বাসিন্দারা জানান, সেদিন সমাধিস্থল স্বাভাবিকভাবেই খোলা ছিল, কিন্তু আগের বছরের মতো কোনো সজ্জা, মঞ্চ, ব্যানার বা কর্মসূচির প্রস্তুতি দেখা যায়নি। কয়েকজন বঙ্গবন্ধুপ্রেমী স্বেচ্ছায় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান, কিন্তু তা ছিল ব্যক্তিগত উদ্যোগে, কোনো সংগঠিত কর্মসূচির অংশ নয়।
ইতিহাসবিদরা সতর্ক করেছেন, এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি হলে জাতীয় ইতিহাস ও রাজনৈতিক ঐতিহ্যের প্রতি মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ণ হতে পারে। তাঁদের মতে, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী শুধু একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়, বরং জাতীয় শোক ও আত্মসমালোচনার দিন। তাই টুঙ্গিপাড়ায় এর অনুপস্থিতি এক গভীর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে—আমরা কি সত্যিই ইতিহাসকে সম্মান করছি?
এখন সবার নজর সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। আগামী বছর এই শূন্যতা পূরণে কী উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং এই বছরের অনুপস্থিতির ব্যাখ্যা কীভাবে দেওয়া হবে—তা নিয়েই জনমনে কৌতূহল ও প্রতীক্ষা।