বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন তরুণ ভোটারদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে। নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক তথ্যানুযায়ী, এবার প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ তরুণ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। এদের মধ্যে অনেকেই প্রথমবারের মতো ভোট দিবেন, যা রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে।
তরুণ ভোটারদের এই অংশগ্রহণের সাথে একটি বেদনাদায়ক অতীতের বাস্তবতা জড়িত। বিগত নির্বাচনে অনেক নতুন ভোটার ভোট দিতে পারেননি। নির্বাচন উপলক্ষে ভোটার তালিকায় নাম না ওঠা এবং ভোটের দিন নিরাপত্তার অভাব ছিল এর প্রধান কারণ। ঢাকার কলেজ শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ বলেন, '২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি নতুন ভোটার হিসেবে ভোট দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু সেদিন কেন্দ্রে পৌঁছেই জানতে পারলাম আমার নাম তালিকায় নেই। সেই আক্ষেপ আজও রয়ে গেছে।'
নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, তরুণ ভোটারদের ভোট নিশ্চিত করতে হলে কেবলমাত্র ভোটার তালিকার সঠিকতা নয়, নিরাপত্তা ও অবাধ পরিবেশও নিশ্চিত করতে হবে। কারণ তরুণ প্রজন্ম এখন সোশ্যাল মিডিয়া ও নানা মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিয়ে আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন।
তরুণ ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত হলে এটি শুধুমাত্র নির্বাচনের ফলাফল নয়, দীর্ঘমেয়াদে গণতন্ত্রের ভিত্তি আরও মজবুত করবে। বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে, তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জই নয়, বরং তারা দেশের নেতৃত্বকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে অভ্যস্ত।
ভোটের দিন যেন সমস্ত ভোটার নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন সেজন্য নির্বাচন কমিশন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। এছাড়া, তরুণদের মধ্যে ভোটের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়িয়েছে। তারা এখন আগের চেয়ে বেশি তথ্যপ্রযুক্তি-সচেতন এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে আগ্রহী। এই প্রজন্মের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করবে।
তরুণ ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে তা দেশের রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। এই পরিবর্তন কেবল বর্তমান প্রজন্মের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।