বরিশালে সিআইডির অভিযানে কনটেন্ট নির্মাতা তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায়। গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান দাবি করেছেন, এ মামলা সম্পূর্ণ ভুয়া এবং আইনের শাসনের অন্তরায়।
বরিশালের বাংলাবাজার এলাকায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) রবিবার রাতে কনটেন্ট নির্মাতা তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করেছে। জানা যায়, তাকে যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলায় আটক করা হয়েছে। তবে এই গ্রেপ্তারকে নিছক ভুয়া মামলার ফাঁদ বলে আখ্যা দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
সোমবার (২৫ আগস্ট) সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে রাশেদ খান লিখেছেন, “যাত্রাবাড়ী থানা হত্যা মামলায় তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু এটি নিছক একটি ভুয়া মামলা। ভুয়া মামলায় কাউকে কেন গ্রেপ্তার করতে হবে? যদি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা তেলবাজির অভিযোগ থাকে, তবে সে অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। কিন্তু হত্যা মামলার মতো গুরুতর অভিযোগে তাকে ফাঁসানো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথে বড় অন্তরায়।”
তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, তৌহিদ আফ্রিদিকে ব্যক্তিগতভাবে তিনি কখনোই পছন্দ করতেন না। তার ভাষায়, “আমি সবসময় বলেছি, এসব তেলবাজরা তরুণদের আইডল হতে পারে না। আমি প্রকাশ্যে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি, বক্তব্য দিয়েছি। কিন্তু এর মানে এই নয় যে তাকে একটি ভুয়া মামলায় ফাঁসানো হবে।”
রাশেদ খান অভিযোগ করেন, জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের পর তারা আইনের শাসনের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এই ধরনের ভুয়া মামলা আইনের শাসনকে বাধাগ্রস্ত করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “যার বিরুদ্ধে যতটুকু অভিযোগ আছে, তাকে ততোটুকুই শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু এর বাইরে মিথ্যা অভিযোগে কাউকে গ্রেপ্তার করা ন্যায়বিচারের সাথে প্রতারণা।”
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও প্রশ্ন তুলেছেন, “যারা সরাসরি আওয়ামী লীগের পদে থেকে এমপি বা মন্ত্রী ছিলেন, তারা কেন এখনো গ্রেপ্তার হচ্ছেন না? তৌহিদ আফ্রিদির চেয়ে তারা অনেক বড় অপরাধী। তারা সন্ত্রাস ছড়িয়েছে, দুর্নীতি করেছে, শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করেছে। অথচ আজ তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নিরাপত্তা পাচ্ছে।”
নিজের ব্যক্তিগত অবস্থান তুলে ধরে রাশেদ খান বলেন, তিনি গত এক বছরে এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করে অনেকের বিরাগভাজন হয়েছেন। কিন্তু এখন যারা তাকে সমালোচনা করতেন, তারা নিজেরাই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের কড়া সমালোচনা শুরু করেছেন। তার ভাষায়, “আমি সরকারের সমালোচনা আপাতত বন্ধ রেখেছি। কারণ মনে হচ্ছে, স্বার্থে আঘাত লাগার কারণে বা সরকারের সাথে নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে অনেকের বিবেক এখন জেগে উঠেছে। তারা আপাতত আগের সব সমালোচনার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে।”
তৌহিদ আফ্রিদির গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে ইতোমধ্যেই ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ঘটনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার প্রক্রিয়ার ওপর প্রশ্ন তুলছে। রাজনৈতিক মহলও এ নিয়ে নানান প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হলো—এ গ্রেপ্তার কি সত্যিই আইনের শাসনের অংশ, নাকি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আরেকটি উদাহরণ? সমাজের বিভিন্ন স্তরে এই আলোচনার জোর ক্রমেই বাড়ছে।