বরিশালে অভিযান চালিয়ে কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। গ্রেপ্তারের সময় তিনি পুলিশের কাছে স্ত্রীকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
আলোচিত ও সমালোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদিকে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রোববার (২৪ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল নগরের বাংলাবাজার এলাকার একটি বাসায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। পুরো অভিযানের সময় এলাকাজুড়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং স্থানীয়রা নানা জল্পনা-কল্পনায় মেতে ওঠেন।
গ্রেপ্তারের পর পুলিশের উদ্দেশে আবেগঘন কণ্ঠে আফ্রিদি বলেন, “আমি পালাব না, কোরআনের কসম করছি। আমি সম্প্রতি ওমরা হজ করেছি। আমি শুধু আমার স্ত্রীকে নিয়ে চিন্তিত, কারণ সে এখন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা।” তার এই বক্তব্য দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং অনেকে তা নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠেছেন।
অভিযানের সময় পুলিশ জানতে চায় তিনি যে বাসায় অবস্থান করছিলেন সেটি ভাড়া নেওয়া নাকি নিজের। জবাবে আফ্রিদি জানান, “না, এটা আমার আপন দাদার বাসা। আমি দাদার কবর জিয়ারত করতে এসেছিলাম।” তবে তার এই ব্যাখ্যায় পুলিশের অবস্থান বদলায়নি। সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি হিসেবেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উক্ত মামলায় তৌহিদ আফ্রিদিকে ১১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। দ্বিতীয় আসামি সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং তৃতীয় আসামি সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আব্দুল্লাহ আল মামুনকে। একই মামলায় গত ১৭ আগস্ট ঢাকার বনানী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল আফ্রিদির বাবা ও মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীকেও, যিনি ২২ নম্বর আসামি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার রাতে সিআইডির একটি বিশেষ টিম বাংলাবাজার এলাকার একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রের পাশের বাড়িতে হানা দেয়। সেখানেই অবস্থান করছিলেন তৌহিদ আফ্রিদি। দীর্ঘ সময় তল্লাশির পর তাকে আটক করা হয় এবং সেখান থেকে ঢাকার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।
সিআইডির গণমাধ্যম শাখার পুলিশ সুপার জসিম উদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের সময় যাত্রাবাড়ী থানার হত্যা মামলায় তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাকে ঢাকায় আনা হচ্ছে।”
অন্যদিকে, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমানও বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, “ডিএমপির সিআইডির একটি আভিযানিক টিম বরিশালের বাংলাবাজার থেকে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার পথে রওনা দিয়েছে।”
গ্রেপ্তারের পর থেকে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, কেন আফ্রিদি বরিশালে আত্মগোপন করেছিলেন এবং কেন তিনি সরাসরি আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন না। অন্যদিকে, তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে—আফ্রিদি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতেই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এবং এ ঘটনায় কোনো ধরনের অন্যায় বা রাজনৈতিক প্রভাব নেই। এখন মামলার তদন্ত এবং আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গ্রেপ্তারের পর বিশেষ করে তার স্ত্রীর অন্তঃসত্ত্বা অবস্থা নিয়ে মানবিক আলোচনাও সামনে এসেছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই বলছেন, একজন ছয় মাসের গর্ভবতী নারীর মানসিক চাপ বেড়ে যেতে পারে স্বামীর এমন গ্রেপ্তারে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, মানবিক দিক অবশ্যই বিবেচনা করা হবে, তবে আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন।
তৌহিদ আফ্রিদির গ্রেপ্তার নিয়ে এখন দেশজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সবাই বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন। মামলার অগ্রগতি এবং আদালতের রায়ের ওপরই এখন নির্ভর করছে আফ্রিদির ভাগ্য।