তোমরা আমার ছেলেকে এনে দাও, সাংবাদিক তুহিনের বাবা

Jewel Azzam avatar   
Jewel Azzam
The brutal murder of journalist Tuhin has shaken an entire village. His father pleads in tears, "Bring back my son." Family and locals demand justice and punishment for the killers.

সাংবাদিক তুহিনের নির্মম হত্যাকাণ্ডে কাঁদছে পুরো গ্রাম। বৃদ্ধ বাবার আর্তনাদ—“তোমরা আমার ছেলেকে এনে দাও।” পরিবার ও এলাকাবাসীর একটাই দাবি—খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

গাজীপুরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের মৃত্যুর খবরে তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া মৌলভীবাড়িতে নেমেছে গভীর শোক। বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে বাবা-মা ও স্বজনদের আহাজারিতে। প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু কেউই এই মর্মান্তিক ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না।

তুহিনের বাবা হাসান জামিল চোখের পানি ফেলতে ফেলতে শুধু একটাই কথা বলছেন—আমি কারও ক্ষতি চাই না। তোমরা শুধু আমার ছেলেটাকে এনে দাও।
এই আর্তনাদে কেঁপে উঠেছে চারপাশ।

তুহিন ছিলেন হাসান জামিল ও সাহাবিয়া খাতুন বকুল দম্পতির ৭ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট। স্থানীয় আল হেরা একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০২ সালে মাধ্যমিক ও সিলেট এম সাইফুর রহমান কলেজ থেকে ২০০৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর তিনি গাজীপুরে গিয়ে বসবাস শুরু করেন।

সাংবাদিক তুহিন গাজীপুরে স্ত্রী মুক্তা বেগম ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন। বড় ছেলের বয়স ৭ বছর, ছোট ছেলের ৩ বছর। জীবিকার জন্য তিনি একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন এবং পাশাপাশি একটি ক্লিনিক পরিচালনার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। বিগত ৩-৪ বছর ধরে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গেও যুক্ত হন।

তুহিনের বন্ধু আজিজুর রহমান জানান, সে পরিবারকে সময় দিত, মায়ের জন্য ওষুধ পাঠাতো, বাবার খোঁজ নিত। এমন একজন মানুষ কেনো খুন হতে হবে?

মর্মাহত পিতা হাসান জামিল বলেন, ছেলে বলেছিল মাকে চিকিৎসা করাতে বাড়ি নিয়ে যাবে। সেই ছেলে আজ আমার কাছে লাশ হয়ে ফিরছে। কী অপরাধ ছিল তার?

মা সাহাবিয়া খাতুন বকুল কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, দুই দিন আগে কল দিয়ে দুই নাতির সঙ্গে কথা বলিয়েছে। তারপর আর কিছু শোনলাম না। আমার বাবারে কারা মারলো? কেনো মারলো?

তুহিনের বড় ভাইয়ের স্ত্রী নূরুন্নাহার বেগম বলেন, যারা তুহিনকে মেরেছে, তাদের ফাঁসি চাই। তারা মানুষ না। এভাবে কেউ কোনো মানুষকে হত্যা করতে পারে না।

ভাগ্নে আবু রায়হান বলেন, আমার মামা ভালো মানুষ ছিলেন। তার খুনিদের ফাঁসি চাই।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তুহিনের বড় ভাই জসিম উদ্দিন গাজীপুরে ব্যবসা করতেন, তিনি ২০০৯-১০ সালের দিকে ক্যান্সারে মারা যান। এরপর তুহিন ও তার অন্য ভাই সেলিম সেখানে বসবাস শুরু করেন। সেলিম বর্তমানে পরিবহন শ্রমিক। দ্বিতীয় ভাই জাহাঙ্গীর কক্সবাজারে, আরেক ভাই শাজাহান মিয়া সিলেটে বাস করেন। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়িতে থেকে বাবা-মাকে দেখাশোনা করতেন মূলত ছেলেরা।

তুহিনের বন্ধু নাসির উদ্দিন জানান, “শেষ কোরবানির ঈদে বাড়িতে এসেছিলেন। একদিন ছিলেন, পরদিন চলে যান। এরপর আর দেখা হয়নি।”

নাসির আরও বলেন, তুহিনের মতো একজন ভালো মানুষকে যে এভাবে হত্যা করা হলো, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

তুহিনের পরিবার জানিয়েছে, গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় জুমার নামাজের পর তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মরদেহ গ্রামের বাড়ি আনা হবে এবং মাগরিবের নামাজের পর দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

তুহিনের এই অকাল মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজের ক্ষতি। এমন ঘটনা যেন আর কোনো পরিবারকে দেখতে না হয়, সেই প্রত্যাশাই এখন সবার।

Geen reacties gevonden