গাইবান্ধার সাঘাটা থানায় ঢুকে এএসআইকে ছুরিকাঘাত করে পালানো এক অজ্ঞাত যুবকের লাশ ১৪ ঘণ্টা পর উদ্ধার হলো থানা পেছনের পুকুর থেকে।
গাইবান্ধার সাঘাটা থানায় ঘটে গেলো এক অভূতপূর্ব ঘটনা—রাতে থানায় ঢুকে দায়িত্ব পালনরত এএসআই মহসিন আলীর ওপর এক দুর্বৃত্ত ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। তারপর পুকুরে আত্মগোপনের ১৪ ঘণ্টা পর সেই হামলাকারী যুবকের নিথর মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হঠাৎ এক অজ্ঞাত যুবক থানার ভেতরে প্রবেশ করে কর্তব্যরত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মহসিন আলীর মাথা ও হাতে ছুরিকাঘাত করে এবং তাঁর রাইফেল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আহত এএসআই চিৎকার দিলে থানার অন্যান্য পুলিশ সদস্য এবং স্থানীয়রা ছুটে আসে।
দ্রুত প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় জনতা ও পুলিশ মিলে হামলাকারীকে ধাওয়া করে। সেই যুবক পালিয়ে পাশের সাঘাটা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুরে লাফিয়ে আত্মগোপনের চেষ্টা করে। তবে পুকুরটি ছিল ঘন কচুরিপানায় ভরা, ফলে তাৎক্ষণিকভাবে তার অবস্থান নিশ্চিত করা যায়নি।
রাতভর পুকুর ঘিরে চলে তল্লাশি অভিযান। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং উৎসুক জনতা মিলে প্রায় ১৪ ঘণ্টা ধরে দুর্বৃত্তটিকে খুঁজতে থাকে। অবশেষে শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকাল ৮টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল থানার পেছনের সেই পুকুর থেকে হামলাকারীর মরদেহ উদ্ধার করে।
সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাদশা আলম গণমাধ্যমকে জানান, "হামলাকারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো তার পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি।"
এদিকে আহত এএসআই মহসিন আলীকে বৃহস্পতিবার রাতেই সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার অবস্থা এখন শঙ্কামুক্ত এবং তিনি সুস্থ আছেন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাঘাটা থানায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের অনেকেই বলেন, থানার মতো নিরাপদ জায়গায় এমন ভয়াবহ হামলা নিঃসন্দেহে অস্বাভাবিক ও উদ্বেগজনক।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, হামলাকারীর পরিচয় জানার জন্য তাঁর ছবি ও বর্ণনা আশপাশের থানা ও গোয়েন্দা বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই ব্যক্তি মানসিকভাবে অস্থিতিশীল হতে পারে কিংবা কোনো পূর্বপরিকল্পিত উদ্দেশ্যে থানায় ঢুকে হামলা চালিয়েছে। তবে বিস্তারিত জানার জন্য পুলিশ তার পরিচয় জানার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
ঘটনার পর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে থানার চারপাশে। একই সঙ্গে থানায় প্রবেশের নিয়মেও পরিবর্তন আনা হতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।