দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা ভবনে নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ওসির বডিগার্ড কনস্টেবল সাফিউর রহমানের বিরুদ্ধে। অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্য, তবে মামলার পরিবর্তে ওসি ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা ভবনে সংঘটিত এক ভয়াবহ ঘটনায় নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন কনস্টেবল সাফিউর রহমান। তিনি থানার ওসি সৈয়দ মোহাম্মদ আকতার হোসেনের বডিগার্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ঘটনাটি জানাতে থানায় বারবার গেলেও ওসি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্য জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে থানায় অভিযোগ করার চেষ্টা করছিলেন কিন্তু ওসির মন গলছিল না। অবশেষে বিষয়টি ঢাকা জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছালে ওসি বাধ্য হয়ে সাফিউর রহমান এবং ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্যকে পুলিশ লাইনে বদলি করেন।
সূত্র জানায়, ঘটনাটি গত রমজান মাসে ঘটে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা ভবনের দ্বিতীয় তলায় নারী পুলিশ ব্যারাকে ফাঁকা রুমে ঢুকে সাফিউর রহমান দরজা আটকে দিয়ে নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণ করেন এবং সেই দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করেন। এরপর থেকে ভিডিও ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে বারবার ধর্ষণের শিকার করেন। নির্যাতনের একপর্যায়ে ভুক্তভোগী আত্মহত্যার হুমকি দেন। তখন তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন সাফিউর রহমান। কিন্তু পরে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করায় তিনি সব কিছু থানার দ্বিতীয় অফিসার এসআই ইবনে ফরহাদকে জানান। কিন্তু ফরহাদ গোপনে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন।
এখানেই থেমে থাকেনি ভুক্তভোগীর দুর্দশা। তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. আল-আমিন, যিনি সাফিউরের একই এলাকার বাসিন্দা, অভিযোগকারীর বিপক্ষে অবস্থান নেন। তিনি শুরু থেকেই ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে কাজ করায় ভুক্তভোগী আরও বিপাকে পড়েন।
থানা সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভুক্তভোগী আশুলিয়া থানা থেকে বদলি হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে যোগ দেন। যোগদানের পর থেকেই সাফিউর তার পিছু নেয় এবং নানা প্রলোভন দেখিয়ে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা চালায়। পরবর্তীতে জোরপূর্বক ধর্ষণের একাধিক ঘটনা ঘটায়।
গত ১৭ আগস্ট নারী পুলিশ সদস্য ওসির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা করার অনুরোধ জানালেও তিনি মামলা নেননি। ফলে ভুক্তভোগী সরাসরি ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এতে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে এবং বিভিন্ন মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
অভিযুক্ত সাফিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এদিকে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. আল-আমিন বলেন, “প্রথমে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেছি। আমি চাইনি ঘটনাটি বাইরে জানাজানি হোক। তবে আমি কারও পক্ষ নিইনি।”
অন্যদিকে ওসি সৈয়দ মোহাম্মদ আকতার হোসেন বলেন, “হ্যাঁ, আমার থানায় এক নারী পুলিশ সদস্যকে নিয়ে ঘটনা ঘটেছে। তবে তিনি আমার কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। আমি বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি এবং উভয়কে পুলিশ লাইনে বদলি করেছি। এখন জেলা পুলিশ সুপারই বিষয়টি তদারকি করছেন।”
এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভেতরে নারী সদস্যরাই যদি নিরাপদ না থাকেন, তবে সাধারণ জনগণ কতটা নিরাপদ – এমন প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
এমন অভিযোগের মুখে পুলিশের ভাবমূর্তি আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হলো। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঘটনায় সঠিক বিচার না হলে ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্যের মতো অন্য অনেক নারী সদস্যও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন।