বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই দেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হবেন। কাকরাইলে ড্যাবের জাতীয় সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ঘিরে দলটির সর্বোচ্চ পর্যায়ের ঘোষণা। শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে অনুষ্ঠিত ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) জাতীয় সম্মেলনে যোগ দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা দেন— তারেক রহমানই দেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা শুধু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা বা ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য লড়াই করছি না। আমরা চাই জনগণের স্বাস্থ্যসেবা, ভাতের নিশ্চয়তা এবং প্রতিটি মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত হোক।” তার মতে, দেশের চিকিৎসকরা উপমহাদেশে সেরা মানের হলেও মূল সমস্যাটি রয়েছে প্রশাসনিক ব্যবস্থায়। “আমাদের সিস্টেম ভেঙে পড়েছে। পারস্পরিক হিসেব-নিকেশের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তা আমাদের জাতীয় কাঠামোকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে,” যোগ করেন তিনি।
রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্লোগানের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তব পরিবর্তনের দিকে মনোযোগী হতে হবে। দেশের নেতৃত্বে এমন একজনকে আনতে হবে, যিনি পরিবর্তনের প্রতীক হয়ে উঠবেন। আমার কাছে সেই মানুষটি হলেন তারেক রহমান।
জুলাই মাসে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি। তিনি বলেন, এই গণআন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এটা শুধু রাজনৈতিক দায়িত্ব নয়, এটা মানবিক দায়িত্বও।
ড্যাবের জাতীয় সম্মেলনে অংশ নেওয়া চিকিৎসকরাও দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার নানান সমস্যা তুলে ধরেন এবং সেগুলো সমাধানে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। তারা জানান, চিকিৎসকদের দক্ষতা বিশ্বমানে পৌঁছালেও হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং প্রশাসনিক জটিলতা সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্য বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল ও নেতৃত্ব কাঠামো নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। এই ঘোষণার মাধ্যমে দলটি তারেক রহমানকে শুধু দলের নেতা নয়, দেশের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে।
রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে— এই ঘোষণার মাধ্যমে বিএনপি একদিকে তাদের নেতৃত্ব প্রশ্নে দ্বিধাহীন অবস্থান জানিয়ে দিল, অন্যদিকে আগামী নির্বাচনের জন্যও একটি শক্তিশালী প্রচারমূলক বার্তা ছুড়ে দিল। তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এই বক্তব্যকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন এবং সমালোচনা করছেন, বলছেন— জনগণের ভোট ছাড়া কাউকে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করা গণতান্ত্রিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী।
এদিকে, দেশের সাধারণ ভোটারদের একাংশ এই ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও, অন্য অংশ প্রশ্ন তুলেছে— আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আসলেই তারেক রহমান দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করতে পারবেন কি না। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্য বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে এবং আগামী দিনের রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়বেই।