আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে এবং সাংবাদিকদের মুক্তভাবে কাজের পরিবেশ দিতে কমিশন গঠন করা হবে। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ আমলে সাংবাদিকতা ধ্বংস করা হয়েছে।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আবারো সরব হয়েছেন বিএনপির নেতারা। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দাবি করেছেন, বিগত ১৫ বছরের শাসনামলে সাংবাদিকতা কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে। তার বক্তব্যে উঠে আসে, আওয়ামী লীগ সরকার দেশে গণমাধ্যমের জন্য কোনো স্বাধীন পরিবেশ রাখেনি।
শনিবার (২৩ আগস্ট) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘ফ্যাসিস্ট আমলে সাংবাদিকতা এবং বর্তমান অবস্থা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ অভিযোগ করেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট শাসনামলে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। অনেক সাংবাদিক পেশা ছেড়ে দিয়েছেন, কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বিদেশে চলে গেছেন। বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে, সাংবাদিকতা বলে কোনো পেশা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি।”
আমীর খসরু আরও জানান, তিনি নিজেই কয়েকজন সাংবাদিককে বিদেশে যেতে সহায়তা করেছেন, কারণ দেশে তাদের পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যাচ্ছিল না। তিনি বলেন, “রাষ্ট্রে বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও সংসদের মধ্যে যেমন সীমারেখা থাকা উচিত, তেমনি একটি মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট ও সাংবাদিকতার মধ্যেও স্পষ্ট সীমানা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এই সীমারেখা ভেঙে ফেলা হয়েছে।”
তার বক্তব্যে উঠে আসে যে, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও সংসদের ক্ষমতার পৃথকীকরণ নষ্ট হয়ে গেছে। একইসঙ্গে, সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে একে নিয়ন্ত্রণ করেছে। এর ফলে, গণমাধ্যম কার্যত অচল হয়ে পড়ে এবং গণতন্ত্রের পথরোধ করা হয়।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “শুধু রাজনৈতিক গণতন্ত্র নয়, অর্থনৈতিক গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের গণতন্ত্রও সমানভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্যথায়, জনগণের গণতান্ত্রিক পদযাত্রা ব্যাহত হয়।”
এসময় তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উদাহরণ টেনে বলেন, “পাঁচ আগস্টের পর একজন কার্টুনিস্ট তারেক রহমানকে নিয়ে একটি ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন আঁকেন। অথচ তারেক রহমান ক্ষুব্ধ না হয়ে বরং সেটি নিজে শেয়ার করেন এবং কার্টুনিস্টকে প্রশংসা করেন। এটাই হচ্ছে মুক্ত গণমাধ্যম ও স্বাধীন মতপ্রকাশের প্রতি প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন।”
আমীর খসরু আশ্বাস দেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে এবং সাংবাদিকদের নিরাপদ ও স্বচ্ছভাবে কাজের পরিবেশ গড়ে তুলতে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা হবে। তার দাবি, বিএনপি বিশ্বাস করে যে, স্বাধীন সাংবাদিকতা ছাড়া প্রকৃত গণতন্ত্র সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে সাংবাদিকতা নিয়ন্ত্রণ করেছে, তাতে সাংবাদিকরা ভীত হয়ে পড়েছেন। তারা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানা হয়রানির শিকার হয়েছেন। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে গণমাধ্যম হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন। সাংবাদিকরা সত্য প্রকাশে বাধাহীনভাবে কাজ করতে পারবেন।”
তারেক রহমানের এই অবস্থান ও বিএনপির অঙ্গীকার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশের জন্য যেমন স্বাধীন বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশন অপরিহার্য, তেমনি স্বাধীন সাংবাদিকতাও সমানভাবে প্রয়োজন।
এই সেমিনারে উপস্থিত সাংবাদিক ও অংশগ্রহণকারীরাও গণমাধ্যমের বর্তমান অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা ব্যাহত হলে জনগণের কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হয়। তাই সাংবাদিকতার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিক উদ্যোগ নেওয়া সময়ের দাবি।