তারা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষা করে দিল্লির স্বার্থে কথা বলেন..

Abdullah Al Mamun avatar   
Abdullah Al Mamun
আমাদের দেশে কিছু হিন্দু নেতা ও সংগঠনকে দেখা যায় ভারতের প্রতি এমন একনিষ্ঠতার সঙ্গে কথা বলতে, যেন বাংলাদেশ তাদের নিজ দেশ নয়—ভারতই যেন তাদের আশ্রয়স্থল..

সম্প্রতি ভারতের যুদ্ধোন্মাদনার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের হিন্দু সম্প্রদায় যেভাবে সরব হয়েছে, তা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ও জাতিগত বাস্তবতায় এক বিরল ঘটনা। ১ মে, প্রাদেশিক রাজধানী কোয়েটায় হিন্দু পঞ্চায়েতের ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ র‍্যালিতে শত শত হিন্দু নাগরিক অংশগ্রহণ করেন এবং ভারতের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিবাদ জানান। সংখ্যালঘুবিষয়ক সংসদীয় সচিব সঞ্জয় কুমার নিজে এই র‍্যালির নেতৃত্ব দেন। তাদের এই প্রতিবাদ শুধু সাহসিকতা নয়—এটি ছিলো দেশের প্রতি আনুগত্যের স্পষ্ট প্রকাশ।

বিক্ষোভে বক্তারা ভারতের আচরণকে “যুদ্ধোন্মাদনা” বলে আখ্যা দেন এবং কাশ্মীরের পেহেলগাম হামলার ঘটনার তদন্তে পাকিস্তান সরকারের সহযোগিতা প্রস্তাবের প্রশংসা করেন। সঞ্জয় কুমার খোলাখুলি বলেন, “ভারত প্রকৃত দোষীদের খুঁজে না পেয়ে যুদ্ধোন্মাদনা চালাচ্ছে, এটি একটি ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন।”

এই বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি কৌশলগতও। কারণ এই বিক্ষোভ ছিলো এক জাতীয় ঐক্যের প্রতীক—যেখানে ধর্ম নয়, দেশপ্রেম ছিলো মুখ্য।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে কিছু হিন্দু নেতা ও সংগঠনকে দেখা যায় ভারতের প্রতি এমন একনিষ্ঠতার সঙ্গে কথা বলতে, যেন বাংলাদেশ তাদের নিজ দেশ নয়—ভারতই যেন তাদের আশ্রয়স্থল, তাদের নীতিনির্ধারক। কিছু সংগঠন কিংবা বুদ্ধিজীবী ভারতের প্রতি এতটাই অনুগত থাকে যে, তারা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষা করে দিল্লির স্বার্থে কথা বলেন।

কিন্তু প্রশ্ন হলো—ভারত বন্ধু হতেই পারে, তবে ভারতের অনুকরণে দেশ চালানোর অধিকার বাংলাদেশের হিন্দু-মুসলিম কোনো নাগরিকেরই নেই।

ভারত বন্ধুর মতো আচরণ করুক, প্রভুর মতো নয়

বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই ভারতের সংস্কৃতির ঘনিষ্ঠতা এবং ধর্মীয় মিল থাকার কারণে একধরনের আবেগগত টান অনুভব করেন, তা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই আবেগ যদি রাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায়, তবে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

ভারতের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে বাংলাদেশের ন্যায্য স্বার্থ বিসর্জন দেওয়া—এটি কোনোভাবেই দেশপ্রেম হতে পারে না। বরং পাকিস্তানের হিন্দুদের মতো বাংলাদেশি হিন্দুদেরও প্রমাণ করতে হবে—তারা বাংলাদেশকেই নিজের মাতৃভূমি মানেন এবং যে কোনো বিদেশি চাপের বিরুদ্ধে তার পাশে থাকবেন।

সর্বোচ্চ ধর্ম—দেশপ্রেম

হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান—সব ধর্মের ওপরে যে একটি বড়ো ধর্ম আছে, সেটি হলো “দেশপ্রেম”। একজন প্রকৃত নাগরিক তার ধর্মের চেয়ে আগে দেশকে ভালোবাসেন। পাকিস্তানের হিন্দু সম্প্রদায় সেটি করে দেখিয়েছে—তারা প্রমাণ করেছে যে ধর্ম নয়, দেশ আগে। বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছেও এখন সেই প্রশ্ন—আপনারা ভারতের মুখপাত্র হবেন, নাকি বাংলাদেশের আত্মসম্মানী নাগরিক?

বাংলাদেশের জন্য এই সময়ে সবচেয়ে প্রয়োজন—একটি ঐক্যবদ্ধ বার্তা:

"ভারত আমাদের বন্ধু, তবে তারা আমাদের নীতিনির্ধারক হতে পারবে না।"
"যদি কেউ সেটি চায়, তবে জাতি হিসেবে আমরা একসাথে তা রুখে দেবো—এই হোক আমাদের জাতীয় ধর্ম।"

পাকিস্তানের হিন্দুরা যেভাবে ভারতের যুদ্ধোন্মাদনার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছে, তা কেবল একটি প্রতিবাদ নয়—এটি এক দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের উচিত এখন নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করা। দেশের বিরুদ্ধে বিদেশি পক্ষপাতিত্ব কোনো নাগরিকের জন্যই গ্রহণযোগ্য নয়। আর হিন্দু সম্প্রদায়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি গোষ্ঠী যদি এ বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা না দেয়, তবে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও আস্থার সংকট আরও গভীর হবে।

এখন সময় দেশকে ভালোবাসার, ধর্মের নামে বিভ্রান্ত হওয়ার নয়।

✍️ লেখক: আবদুল্লাহ আল মামুন

Tidak ada komentar yang ditemukan