close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

টাক মাথায় চুল লাগানো ও জিমে সময় কাটছে পলাতক আ.লীগ নেতাদের

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Fugitive Awami League leaders in Kolkata’s New Town are living secretive lives — spending time in gyms, cooking their own meals, and even undergoing hair transplants to rebuild their image.

ভারতের কলকাতার নিউ টাউনে আশ্রয় নেওয়া পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের জীবনযাপন এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কেউ জিমে যাচ্ছেন, কেউ রান্নায় ব্যস্ত, আবার কেউ চুল প্রতিস্থাপন করিয়ে নতুন রূপে ফিরতে চেষ্টা করছেন।

স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের বহু শীর্ষ নেতা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। জনসম্মুখ থেকে নিজেদের আড়াল করে রাখলেও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট এর অনুসন্ধানে তাদের গোপন জীবনযাত্রার নানা চিত্র সামনে এসেছে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, পলাতক এই নেতারা মূলত কলকাতার নিউ টাউন এলাকায় ভাড়া করা ফ্ল্যাটে কিংবা স্বজনদের বাড়িতে অবস্থান করছেন। বাইরে কম বের হলেও তারা ঘরে বসে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করছেন এবং ব্যক্তিগত নানা কাজে সময় কাটাচ্ছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই নেতারা জনসাধারণের চোখ এড়িয়ে থাকার চেষ্টা করছেন। তাদের বেশিরভাগেরই দৈনন্দিন রুটিন এখন জিমে যাওয়া, রান্না করা এবং অনলাইন মিটিং ঘিরে আবর্তিত। কারও কারও চুল পড়া রোধে দিল্লির ক্লিনিকে গিয়ে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টও করাতে দেখা গেছে। আবার কেউ শরীরচর্চার পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরীক্ষায় মনোযোগী হয়েছেন। এভাবেই তারা নিজেদের সময়কে কাটাচ্ছেন অচেনা প্রবাস জীবনে।

দ্য প্রিন্ট জানায়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতও সেখানে অবস্থান করছেন। আরাফাত জানিয়েছেন, তার দিন-রাত এখন শুধু কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে, কামালকে ২০২৪ সালের অক্টোবরে কলকাতার নিক্কো পার্কে দেখা গিয়েছিল, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। পরে জানা যায়, তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে নিউ টাউনের একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকছেন এবং ভারতের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নিউ টাউন বেছে নেওয়ার পেছনে রয়েছে নানা কারণ। প্রশস্ত রাস্তা, সাশ্রয়ী ভাড়া, আধুনিক জিম ও হাসপাতাল, এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি অবস্থান তাদের কাছে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে জায়গাটিকে আকর্ষণীয় করেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, এখানে থাকা সাবেক এমপিদের কেউ কেউ নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়মিত বসেন, তবে সেটিকে আনুষ্ঠানিক পার্টি অফিস বলা যাবে না। বরং সেটি একটি মিলনকেন্দ্র, যেখানে তারা ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করেন।

কক্সবাজারের এক সাবেক এমপি জানান, তার প্রতিদিনের রুটিন এখন নিয়মিত হয়ে গেছে। তিনি ভোরে নামাজ আদায় করে স্থানীয় জিমে যান। কেউ ভারোত্তোলন করেন, কেউ পিলাটেসে অংশ নেন। ১৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটে তারা মাসিক ৩০ হাজার টাকা ভাড়ায় থাকেন। রাঁধুনি না থাকলে নিজেরাই রান্না করতে হয়, আর রান্নার কৌশল শিখতে হয় ভিডিও কলে স্ত্রীকে ফোন করে। দুপুরের বিশ্রাম শেষে সন্ধ্যায় তারা ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নেন, যেখানে কলকাতা, দিল্লি, ঢাকা ও প্রবাসের নেতাকর্মীরা যুক্ত থাকেন।

প্রতিবেদনে সাবেক কূটনীতিক হারুন আল রশিদের কথাও উঠে এসেছে। মরক্কোয় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা এ কূটনীতিক এখন কানাডার অটোয়ায় থাকছেন। সরকার পতনের পর তার পাসপোর্ট বাতিল হলেও তিনি লেখালেখিতে সময় দিচ্ছেন। এমনকি নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটি ডিসটোপিয়ান উপন্যাসও লিখেছেন তিনি।

অন্যদিকে কলকাতার এক সাবেক এমপি জানিয়েছেন, তিনি এই সময়টাকে ব্যক্তিগত উন্নয়নের সুযোগ হিসেবে নিচ্ছেন। চুল পাতলা হয়ে যাওয়ায় দিল্লির একটি ক্লিনিকে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করিয়েছেন। নতুন চুল ওঠায় তিনি মনে করছেন অন্তত জীবনে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে পলাতক নেতারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। কেউ ভবিষ্যতে দেশে ফেরার আশা রাখছেন, আবার কেউ বর্তমান সময়কে আত্ম-উন্নয়নের সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার—এখনও তারা দেশে ফেরার মতো পরিবেশ দেখছেন না। এ কারণেই কলকাতা এবং অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে থাকা এসব নেতাদের জীবনযাপন সাধারণ মানুষের কাছে হয়ে উঠেছে এক রহস্যময় কৌতূহলের বিষয়।

No comments found