ডেস্ক রিপোর্ট::
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খাবার সরবরাহের টেন্ডারকে কেন্দ্র করে উপজেলা ছাত্রদল ও যুবদলের দুই নেতার মধ্যে কথা কাটাকাটি, হাতাহাতি ও পরে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আবুল হাসান রাসেল। তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আরেক পক্ষের যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর আলমও সামান্য আঘাত পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে এবং পরে গেটের সামনে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। দু’জনেই জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুল ইসলাম কামরুলের ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনাটি শুধু দুই নেতার ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নয়—বরং এর মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, টেন্ডারবাজি ও এলাকা নিয়ন্ত্রণের গোপন প্রতিযোগিতা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের খাবার সরবরাহের দায়িত্ব একটি ঢাকাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ফাতেমা ট্রেডার্স’কে দেওয়া হয়েছে। তবে এই ঠিকাদারিকে কেন্দ্র করেই দীর্ঘদিন ধরে যুবদল ও ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। ঘটনার দিন হাসপাতালে প্রবেশের সময় ছাত্রদল নেতা রাসেল বলেন, “বিএনপির কে আপনাদের কাছে চাঁদা চেয়েছে বলেন?” এ সময় যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম তার মোবাইল ফোনে কথোপকথন রেকর্ড করতে চাইলে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি ও সংঘর্ষ বাঁধে, যা পরে রক্তক্ষয়ী হয়ে ওঠে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “টেন্ডার নিয়ে নতুন করে কিছু হয়নি। সিদ্ধান্ত অনেক আগেই হয়েছে। বরং ওরা নিয়মিত হাসপাতালে গিয়ে বিশৃঙ্খলা করে, গালাগালি করে। আজও এমনই ঘটনা ঘটেছে। আমি শুধু রেকর্ড করতে গিয়েছিলাম, তখনই রাসেল আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।”
অন্যদিকে, রাসেলের পরিবারের দাবি, হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারণেই রাসেলকে পরিকল্পিতভাবে হামলার শিকার হতে হয়েছে। তার বাবা এমরান হোসেন জানান, “আমি ময়মনসিংহে আছি। ছেলের মাথায় আঘাত পাওয়ার খবর পেয়েছি, তবে কিভাবে বা কেন তা এখনো বিস্তারিত জানি না।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুল ইসলাম কামরুলের আশীর্বাদপুষ্ট নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই ঠিকাদারি, টেন্ডার এবং সরকারিভাবে বরাদ্দ হওয়া বিভিন্ন প্রকল্পে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে আসছেন।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মির্জা রিয়াদ হাসান বলেন, “হাসপাতালের খাবার সরবরাহের দরপত্র প্রক্রিয়া গত ২ জুলাই সম্পন্ন হয়েছে। এরপরও এ নিয়ে দুই নেতার মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। রাসেল হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে কথা বলেছিল, আর জাহাঙ্গীর বলেছিল সেবা ভালো আছে। প্রথমে কথা কাটাকাটি ও পরে হাতাহাতি হয়। রাসেল আহমদ গুরুতর জখম হওয়ায় আমরা তাকে সিলেটে পাঠিয়েছি।”
স্বাস্থ্যসেবা জনগণের মৌলিক অধিকার হলেও তাহিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেই সেবা এখন দলীয় রাজনীতির বলি হতে চলেছে। তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে হাসপাতালের মধ্যে মারামারি এবং পরে সংঘর্ষ—সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষের মনে ভয় ও হতাশা তৈরি করেছে।
একজন রোগীর অভিভাবক বলেন, “হাসপাতাল তো আর রাজনীতির জায়গা না। অথচ এখানে দেখছি ছাত্রদল-যুবদলের নেতারা একে অপরকে মারছে। আমরা এখন কোথায় যাব?”