যুবদল নেতা আরিফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে দেখে আদালতের অন্য আসামিরা হঠাৎ 'জয় বাংলা' স্লোগান দেন। আদালত তার ফের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।
আলোচিত যুবদল নেতা আরিফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে ফের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার (৯ জুলাই) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শুনানি চলাকালে এক অদ্ভুত দৃশ্যের জন্ম হয়। আদালতে হাজির হওয়ার সময় প্রিজন ভ্যানে থাকা অন্য আসামিরা হঠাৎ 'জয় বাংলা' স্লোগান দিতে শুরু করেন। অনেকেই এই আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং প্রশ্ন তোলেন—সুব্রত বাইন কি আওয়ামী লীগের কেউ?
ঘটনাটি ঘটে দুপুর ২টা ১৩ মিনিটে, যখন আদালতের হাজতখানা থেকে সুব্রত বাইনকে বের করে এজলাসে তোলা হচ্ছিল। তার পাশেই থাকা প্রিজন ভ্যানে কয়েকজন আসামিকে জোরে জোরে 'জয় বাংলা' বলতে শোনা যায়। উপস্থিত আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এই আচরণ নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। কেউ বলেন, হয়তো আসামিরা সুব্রত বাইনকে আওয়ামী লীগের কেউ বলে ভুল করেছেন, আবার কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেন এই আচরণ ইচ্ছাকৃত কিনা।
এর মাত্র চার মিনিট পর, ২টা ১৭ মিনিটে, সুব্রত বাইনকে লিফটে করে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল ওয়াহাবের এজলাসে নেওয়া হয়। তার শরীরে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল। এক হাতে ও পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরানো অবস্থায় ছিলেন তিনি। হাত দিয়ে ডান্ডাবেড়ি ধরে তিনি এগিয়ে আসেন। তার গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট পরানো ছিল, যা থেকে বোঝা যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ আসামি হিসেবে বিবেচনা করছে।
আদালতে শুনানির সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম আসামির ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আজিজুল হক দিদার। তিনি রিমান্ডের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে আবেদন মঞ্জুরের পক্ষে মত দেন।
অন্যদিকে সুব্রত বাইনের পক্ষে তার আইনজীবী মোহাম্মদ বাদল মিয়া রিমান্ড বাতিল করে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। দীর্ঘ শুনানির পর বিচারক আসামিকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে, গত ২৭ মে, যৌথবাহিনীর অভিযানে সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী মোল্লা মাসুদসহ চারজনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ২৮ মে হাতিরঝিল থানার অস্ত্র আইনে দায়ের করা মামলায় সুব্রত বাইনের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত। সেই রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে তদন্তের প্রয়োজনে এবার নতুন করে রিমান্ড চাওয়া হয় এবং তা আংশিক মঞ্জুর করে আদালত ৭ দিনের সময় দেন।
সুব্রত বাইন এক সময়ের কুখ্যাত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে রয়েছে বহু হত্যা, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র মামলার রেকর্ড। তাকে কেন্দ্র করে আদালতের মতো একটি জায়গায় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উঠে আসা একদিকে যেমন অদ্ভুত, অন্যদিকে এটি রাজনৈতিক আবহে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এটি কি শুধুই ভুল সনাক্তকরণ, নাকি উদ্দেশ্যমূলক কোনো বার্তা?
এই ঘটনায় সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনার জন্ম হয়েছে।