রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি সরানো নিয়ে চলছে গুঞ্জন। তবে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানালেন, কোনো সরকারি দপ্তর বা মিশনকে লিখিতভাবে ছবি সরাতে নির্দেশ দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি সরানোর বিষয়টি। শনিবার (১৬ আগস্ট) দিনগত মধ্যরাত থেকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে খবর—বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস ও কনস্যুলেট অফিসগুলোতে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যদিও এ নিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা আসেনি, তারপরও বিষয়টি দ্রুতই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
এ নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। রোববার (১৭ আগস্ট) রাত ১০টা ৫৫ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, “সরকারি দপ্তরে পোর্ট্রেট ব্যবহার শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার নিরুৎসাহিত করছে। অলিখিতভাবে একটি জিরো পোর্ট্রেট নীতি চালু রাখা হয়েছে। তবে কোনো ছবি সরিয়ে ফেলার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি দপ্তর কিংবা মিশনকে লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
তার এই ব্যাখ্যার মধ্য দিয়েই স্পষ্ট হয় যে, সরকার শুরু থেকেই সরকারি দপ্তরে ছবি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করলেও ছবিগুলো সরানোর জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা নিজের দায়িত্বে সরকারপ্রধান কিংবা রাষ্ট্রপতির ছবি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু এসব ছবি সরিয়ে ফেলতে কোনো প্রকার লিখিত নির্দেশনা নেই।
ফেসবুক পোস্টে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে উল্লেখ করেন, “আজকে দেখা যাচ্ছে, বিষয়টিকে অযথা বাজার গরম করার মতো করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর রাজনীতিতে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টির সুযোগ কমে আসছে। তাই ছোট ছোট বিষয়কেও বড় করে তুলতে চাওয়া হচ্ছে।”
এই বক্তব্য প্রকাশের পর রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সরকারপ্রধান কিংবা রাষ্ট্রপ্রধানের ছবি অফিস ও কনস্যুলেটগুলোতে ঝুলিয়ে রাখার বিষয়টি প্রায় অলিখিত প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর থেকেই সেই প্রথাকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
তবে মূল প্রশ্ন এখনো থেকেই যাচ্ছে—পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আসলেই কি কোনো মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল? নাকি এটি নিছক গুজব, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে?
সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, এ ধরনের সংবেদনশীল ইস্যুতে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক স্পষ্টীকরণ জরুরি। কারণ রাষ্ট্রপতির ছবি সরানো কিংবা না সরানো বিষয়টি কেবল প্রশাসনিক বিষয় নয়, এটি দেশের রাজনৈতিক আবহকেও প্রভাবিত করে।
বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু নির্বাচনকে সামনে রেখে কাজ করছে, তাই প্রতিটি ইস্যু নিয়ে অযথা বিভ্রান্তি তৈরি হলে তা নির্বাচনকেন্দ্রিক পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এ ধরনের বিতর্কে স্পষ্ট তথ্য দিয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করাই এখন সময়ের দাবি।
এদিকে, রাজনৈতিক মহলের অনেকেই বলছেন, জিরো পোর্ট্রেট নীতি বাস্তবায়ন করা হলে সরকারি দপ্তরে ব্যক্তিকেন্দ্রিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আসবে। তবে বাস্তবে এই নীতি কতটা কার্যকর হবে এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হবে কিনা—সেই প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে।