close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

সরকার না চাইলে ইসির পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: বদিউল আলম..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Badiul Alam Majumdar warned that without the government's will, the Election Commission alone cannot ensure a fair election. He cautioned that another disputed election would push Bangladesh towa..

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, সরকার না চাইলে নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তিনি সতর্ক করে বলেন, এবারও যদি বিতর্কিত নির্বাচন হয় তবে দেশ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাবে।

বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিতর্ক নতুন করে আলোচনায় এসেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদারের বক্তব্যে। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একার পক্ষে কোনোভাবেই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়।

শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে ঢাকার এফডিসিতে আয়োজিত “সুষ্ঠু নির্বাচনে ইসির ভূমিকা” শীর্ষক এক ছায়া সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বদিউল আলম বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন অত্যন্ত জরুরি। তার মতে, ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা না গেলে দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও গভীর হবে। তবে তিনি সতর্ক করে দেন, কেবলমাত্র নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেই হবে না—সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, অর্থাৎ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে না পারলে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্ক থেকেই যাবে।

বদিউল আলম বলেন, “যদি পুরনো ধাঁচে নির্বাচন আয়োজন করা হয়, তাহলে সেটি হবে আগের মতোই—পক্ষপাতদুষ্ট ও বিতর্কিত। এই প্রক্রিয়ায় গণতন্ত্রের কোনো অগ্রগতি হবে না। বরং জনগণের আস্থা হারানো নির্বাচনের কারণে দেশ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও তারা একা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোরও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। কিন্তু দলগুলো যদি সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে আটকে থাকে, তবে ইসির পক্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে উঠবে।

তার বক্তব্যে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে মাঠপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা। বদিউল আলম বলেন, “নির্বাচনকালে মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করলে, ইসির সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অতীতে আমরা দেখেছি প্রশাসনের একাংশ রাজনৈতিক প্রভাবে নিরপেক্ষতা হারিয়েছে, যার ফলে ভোট প্রক্রিয়ায় আস্থা তৈরি হয়নি।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশের স্বার্থে সকল পক্ষকে দায়িত্বশীল হতে হবে। সরকারকে সদিচ্ছা দেখাতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলোকে সহযোগিতা করতে হবে, আর প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। শুধুমাত্র এই সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমেই বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব।

বদিউল আলম মজুমদারের এই বক্তব্যকে ঘিরে নতুন করে আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, যদি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনও বিতর্কিত হয়, তবে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে করে রাজনৈতিক সংকট আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে, যা অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও রয়েছে গভীর উদ্বেগ। তারা আশা করছে, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে একটি অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে। তবে শেষ পর্যন্ত সেই দায়িত্ব সরকারের সদিচ্ছার ওপরই নির্ভর করছে—যা বদিউল আলম মজুমদারের বক্তব্যে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে বহুবার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, সংঘাত ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এবারও যদি সেই একই চিত্র পুনরাবৃত্তি হয়, তবে ভবিষ্যতে গণতন্ত্র আরও সংকটে পড়বে। তাই বদিউল আলমের এই সতর্কবার্তা শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যই নয়, বরং দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।

No comments found