সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবারই প্রথমবার বড় আকারের জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ১৯ জুলাই বিকেল ২টায় শুরু হতে যাওয়া এই সমাবেশে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ ও নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের দাবি জানাবে দলটি।
ঢাকার রাজনীতির কেন্দ্রস্থলে এবার পা রাখছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই প্রথমবারের মতো এককভাবে সমাবেশ করতে যাচ্ছে দলটি। ‘জাতীয় সমাবেশ’ শিরোনামে এই আয়োজনে অংশ নেবে হাজারো নেতাকর্মী ও সমর্থক। আগামী ১৯ জুলাই (শুক্রবার), বেলা ২টা থেকে শুরু হবে এই বহুল প্রতীক্ষিত সমাবেশ।
দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব সূত্রে জানা গেছে, এই সমাবেশের আয়োজনকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগরী থেকে শুরু করে সারা দেশের সাংগঠনিক ইউনিটগুলোকে ইতোমধ্যেই সক্রিয় করা হয়েছে। দলের আমিরসহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সরাসরি তদারকি করছেন প্রস্তুতি। জামায়াত মনে করছে, এই সমাবেশ হবে তাদের জন্য একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’—রাজনৈতিক মঞ্চে শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি ও প্রাসঙ্গিকতা প্রমাণের সুযোগ।
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের গণমাধ্যমকে জানান, “সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর এটি হবে প্রথম একক সমাবেশ। এর আগে এই ঐতিহাসিক ময়দানে আমরা কোনো সময় বড় ধরনের সমাবেশ করিনি।
এই সমাবেশের মূল বার্তা হবে—সুষ্ঠু নির্বাচন, রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সমান সুযোগ তৈরির দাবি এবং নির্বাচন পদ্ধতিতে সংস্কার আনা। বিশেষ করে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR system) চালু ও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেবে দলটি।
তাহের বলেন, “আমরা চাই একটি নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এর আগে সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে সকল দলের জন্য। জনমত গঠনের লক্ষ্যেই এই আয়োজন।”
জানা গেছে, সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারকে আহ্বায়ক করে একটি মূল কমিটি গঠন করা হয়েছে। একইসঙ্গে, কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে একাধিক উপ-কমিটিও কাজ করছে মাঠপর্যায়ে।
বিগত বছরগুলোর তুলনায় এটি হবে জামায়াতের সবচেয়ে বড় ও প্রকাশ্য সমাবেশ। ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের দাবিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বিএনপি, ইসলামী আন্দোলনসহ একাধিক দল। তারা একাধিকবার রাজধানীতে বড় বড় সমাবেশ করে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়।
ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম এবং ওলামা মাশায়েখ পরিষদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিজ নিজ ইস্যুতে বিশাল জনসমাগম ঘটায়। বিএনপি তাদের সমাবেশ করেছে নয়াপল্টনে। কিন্তু জামায়াত এখনো পর্যন্ত রাজধানীতে এমন কোনো বড় জমায়েত করতে পারেনি, যদি না ধরা হয় গত বছর এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে পুরানা পল্টনে আয়োজিত সীমিত সমাবেশটি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াতের এই সমাবেশ শুধুই একটি জনসভা নয়—বরং এটি দলটির রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কৌশলগত এক পদক্ষেপ। তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার গুঞ্জনের মাঝেও যদি দলটি রাজধানীর সবচেয়ে স্পর্শকাতর এলাকায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশ সফলভাবে করতে পারে, তাহলে তা ভবিষ্যতের রাজনীতিতে বড় বার্তা দেবে।
তাছাড়া, এটি দলটির জন্য ‘পুনরায় দৃশ্যপটে ফেরার’ একটি সুযোগও হতে পারে। বিশেষ করে যদি তারা গণমাধ্যম, জনগণ এবং প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে এই সমাবেশ সম্পন্ন করতে পারে।