ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, ক্ষমতার লোভে রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি, বরং স্থায়ী পরিবর্তনের দাবি উপেক্ষিত হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সংস্কার বাস্তবায়নের প্রত্যাশা দীর্ঘদিন ধরেই জনগণের মধ্যে বিরাজমান। তবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম মনে করেন, এ প্রত্যাশা আজও বাস্তব রূপ পায়নি। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ক্ষমতার লোভের কারণে সংস্কার এজেন্ডা থেকে সরে গিয়ে জনগণকে হতাশ করেছে।
শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে রংপুর মহানগর ছাত্রশিবির আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে এ বছরের এসএসসি ও দাখিল সমমান পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা জানানো হয়। সেখানে উপস্থিত থেকে জাহিদুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ বছরের দমন-পীড়ন, স্বৈরশাসন ও ফ্যাসিবাদের পর মানুষ ভেবেছিল একটি নতুন পরিবর্তনের যাত্রা শুরু হবে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো সেই প্রত্যাশাকে পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, “জুলাই স্পিরিটকে ধারণ করে গত এক বছরে যেসব সংস্কার কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি ছিল, তা হয়নি। বরং আমরা দেখেছি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আন্তরিকতার অভাব। জনগণের স্থায়ী পরিবর্তনের দাবিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। ফলে আজও আমরা সেই পুরনো সংকট ও অচলাবস্থার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছি।”
শিবির সভাপতি আরো বলেন, অতিমাত্রায় ক্ষমতালোভী মানসিকতা জাতীয় অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে। বাংলাদেশের মানুষ চায়, স্থায়ী পরিবর্তনের পথে দেশ এগিয়ে যাক। কিন্তু বাস্তবে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ডে সেই অগ্রযাত্রা অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তার মতে, জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে এবং প্রকৃত সংস্কারের মাধ্যমে নতুন পথের সূচনা করতে হবে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর রংপুর জেলার সাবেক আমির এবং রংপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি প্রার্থী অধ্যাপক মাহবুবার রহমান বেলাল উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জেলা ও মহানগর জামায়াতের নেতৃবৃন্দ, মহানগর ছাত্রশিবির সভাপতি নুরুল হুদা, স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কার জরুরি। তারা উল্লেখ করেন, কেবল পরীক্ষায় ভালো ফল করলেই হবে না, শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা, সততা ও দেশপ্রেম দিয়ে গড়ে তুলতে হবে। আর সেই প্রক্রিয়া শুরু হতে হবে জাতীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার ব্যর্থতার কারণে জনগণের মধ্যে হতাশা বেড়েছে বলে মন্তব্য করে জাহিদুল ইসলাম সতর্ক করে দেন যে, জনগণ আর প্রতিশ্রুতির ফাঁকা বুলি শুনতে চায় না। এখন তারা বাস্তব পরিবর্তন চায়। আর এই পরিবর্তন আনতে হলে রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষমতার লোভ ত্যাগ করে জনগণের স্বার্থে একত্রিত হতে হবে।
তার মতে, যদি রাজনৈতিক দলগুলো এ ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে না পারে, তবে জনগণ নতুন বিকল্প নেতৃত্বের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হবে। তখন প্রথাগত রাজনৈতিক শক্তির অস্তিত্বই প্রশ্নের মুখে পড়বে।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই বক্তব্য নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক সংস্কার ব্যর্থতার প্রশ্নটি এখন সময়ের দাবি। কেননা সাধারণ মানুষ এখন শুধু প্রতিশ্রুতিতে নয়, বরং কার্যকর পদক্ষেপে বিশ্বাস করতে চায়।