সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারাকে 'জিহাদিগোষ্ঠী'র সহায়তাকারী বলে অভিযোগ ইসরায়েলের। ড্রুজদের ওপর হামলার আড়ালে রয়েছে বড় ষড়যন্ত্র—জানালেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাটজ।
সিরিয়ার রাজনীতিতে নতুন করে পরিবর্তন আসার পরও বিশ্বাস করতে পারছে না ইসরায়েল। সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারার নেতৃত্ব নিয়েও প্রকাশ্যেই সন্দেহ প্রকাশ করেছে ইহুদিবাদী ইসরায়েল। এ নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, “শারার ওপর ইসরায়েল কোনোভাবেই ভরসা রাখতে পারছে না।”
যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ওয়াশিংটনে সিনেটর টেড ক্রুজের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এসব মন্তব্য করেন। ইসরায়েলি দৈনিক দ্য জেরুজালেম পোস্ট তার বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেছে, “আমরা শুধু ঈশ্বর এবং আইডিএফ-এর (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) ওপরই ভরসা করি।”
কাটজের মতে, নতুন প্রেসিডেন্ট শারা সিরিয়ার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের—বিশেষ করে ড্রুজদের—উপর জিহাদিবাদী গোষ্ঠী ব্যবহার করে হামলা চালাচ্ছেন। তিনি আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে এসব জঙ্গি গোষ্ঠীকে ইসরায়েলের গোলান মালভূমির বসতিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতে পারে।
কাটজ বলেন, “আমি হাফিজ আল-আসাদকে বিশ্বাস করিনি, তার ছেলে বাশার আল-আসাদকেও না। এখন আহমাদ আল-শারাকে তো মোটেও নয়। কারণ, তার অবস্থানই প্রমাণ করে তিনি সিরিয়ার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ এবং বিদ্বেষমূলক ভূমিকায় রয়েছেন।”
প্রসঙ্গত, সিরিয়ায় দীর্ঘ ৬১ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বাথ পার্টির শাসন গত ডিসেম্বরে শেষ হয়। এরপর নতুন সরকার গঠন করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন আহমাদ আল-শারা।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই কঠোর মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে সিরিয়ার প্রেসিডেন্সি শনিবার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ সুয়েইদায় তাৎক্ষণিক ও পূর্ণ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়। এই এলাকা মূলত ড্রুজ জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত, যেখানে গত ১৩ জুলাই থেকে বেদুইন আরব গোষ্ঠী এবং ড্রুজ যোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ চলছে।
সংঘাতের মধ্যেই ইসরায়েল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কসহ বেশ কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। ইসরায়েলের দাবি—এই হামলা ছিল সংখ্যালঘু ড্রুজদের রক্ষা করতে একটি প্রতিরক্ষা পদক্ষেপ। তবে সিরিয়ার ড্রুজ নেতারা স্পষ্ট ভাষায় বিদেশি হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং সিরিয়ার একীভূত সার্বভৌমত্বের পক্ষেই তাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ সংঘাতকে পুঁজি করে ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নিজের সামরিক প্রভাব ধরে রাখতে চায়। তবে এই কৌশল কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।
বিশেষ করে গোলান মালভূমিকে ঘিরে সিরিয়া-ইসরায়েলের এই উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরায়েল এই অঞ্চল অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে, যা জাতিসংঘসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই স্বীকৃতি দেয়নি।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, সিরিয়ায় ক্ষমতার পালাবদলের সুযোগে ইসরায়েল হয়তো নতুন করে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় যেতে পারে। আর তাতেই মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা আরও হুমকির মুখে পড়বে বলে মত বিশ্লেষকদের।