close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

সিরাজগঞ্জে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতায় ভরা রঙিন আয়োজন

Juwel Hossain avatar   
Juwel Hossain
সিরাজগঞ্জ কামারখন্দে জামতৈল ধোপাকান্দি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পুষ্টি মেলার আয়োজনে ছিল এমন সৃজনশীলতা।..

পুষ্টি মানেই শুধু খাবার নয়, বরং সুস্থ শরীর ও সুন্দর মনের বিকাশের মূল ভিত্তি। শিশু-কিশোরদের বেড়ে ওঠার এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতেই সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল ধোপাকান্দি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো এক অনন্য আয়োজন—পুষ্টি মেলা ও আলোচনা সভা।

বুধবার (২৭ আগস্ট) সকাল ১১টায় বিদ্যালয়ের খোলা মাঠে শুরু হয় মেলার আনুষ্ঠানিকতা। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিজস্ব উদ্যোগে এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সার্বিক সহযোগিতায় সাজানো হয় মেলা প্রাঙ্গণ। চারপাশে ঝোলানো হয় পোস্টার, হাতে আঁকা প্ল্যাকার্ড আর রঙিন সাজসজ্জা। স্টলগুলোর টেবিলে রাখা নানা ধরনের পুষ্টিকর খাবার—ডাল, শাক-সবজি, ফলমূল, ডিম, দুধ, মাছসহ দেশীয় নানা উপাদান। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে মুখরিত হয়ে ওঠে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনামিকা নজরুল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইশরাত জাহান, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার রায়, বিআরডিবি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) এস এম শাহাদাত হোসেন, একাডেমিক সুপারভাইজার আনন্দ কুমার মণ্ডল এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোফাজ্জল হোসেন। এছাড়াও বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক সদস্য ও শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

আলোচনা সভায় বক্তারা কিশোর-কিশোরীদের বেড়ে ওঠায় সুষম খাদ্যের গুরুত্ব নিয়ে আলোকপাত করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনামিকা নজরুল বলেন, “সুস্থ জাতি গঠনের জন্য শিশুদের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন। এ ধরনের আয়োজন শিক্ষার্থীদের শুধু সচেতনই করে না, বরং তাদের সৃজনশীলতাকেও বিকশিত করে।”

অন্য বক্তারাও দুধ, ডিম, মাছ ও শাকসবজির উপকারিতা তুলে ধরেন এবং শিক্ষার্থীদের নিয়মিত সুষম খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেন।

শিক্ষার্থীরা দলে দলে মেলায় অংশগ্রহণ করে নিজেদের স্টলে বিভিন্ন খাবার প্রদর্শন করে। কেউ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দিয়ে সাজিয়েছে প্লেট, কেউ আবার রঙিন চার্টে লিখেছে পুষ্টির উপকারিতা। কিছু স্টলে দেখা যায় ঘরে তৈরি খাবার—যেমন ভাপা পিঠা, ডিমের পুডিং, সবজি কাটলেট, দুধ-ভাত ইত্যাদি। প্রত্যেকটি খাবারের পাশে লেখা ছিল এর পুষ্টিগুণ ও শরীরের জন্য উপকারিতা।

আলোচনা শেষে অতিথিরা শিক্ষার্থীদের সাজানো স্টলগুলো ঘুরে দেখেন। তারা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও উপস্থাপনা দেখে মুগ্ধ হন এবং প্রশংসা করেন। অনেকে স্টল থেকে স্বাস্থ্যসম্মত খাবারও আস্বাদন করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অভিভাবকরা জানান, এ ধরনের আয়োজন তাদের সন্তানদের শুধু পাঠ্যবইয়ের বাইরে ব্যবহারিক জ্ঞানই দেয় না, বরং স্বাস্থ্য সচেতন করে তোলে। এক অভিভাবক বলেন, “আমাদের মেয়েরা এখন ঘরে ফিরে খাবারের তালিকায় কোনটা স্বাস্থ্যকর আর কোনটা নয়—সেটা শিখে পরিবারের সবাইকে জানাতে পারবে।”

পুষ্টি মেলা শেষে বিজয়ী স্টলগুলোর শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। করতালি আর উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে বিদ্যালয়ের আঙিনা।

কামারখন্দের জামতৈল ধোপাকান্দি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এ আয়োজন নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা। পাঠ্যবইয়ের বাইরের শিক্ষা, সুষম খাদ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা এবং সৃজনশীলতার প্রকাশ—সব মিলিয়ে এটি হয়ে উঠেছে এক স্মরণীয় আয়োজন।

No comments found