২০২৬ সালের তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে অভিনেতা-রাজনীতিক থালাপতি বিজয় বিজেপিকে ‘একমাত্র আদর্শিক শত্রু’ আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানালেন।
ভারতের দক্ষিণী রাজনীতিতে নতুন এক তীব্র উত্তাপ তৈরি করেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ থালাপতি বিজয়। আসন্ন ২০২৬ সালের তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি মাদুরাই শহরে অনুষ্ঠিত দলীয় দ্বিতীয় রাজ্য সম্মেলনে বিজেপিকে সরাসরি একমাত্র আদর্শিক শত্রু হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তার ভাষণে শুধু রাজনৈতিক বার্তা নয়, আঞ্চলিক গর্ব, আবেগ এবং ইতিহাসের সমান্তরাল চিত্র তুলে ধরে সমর্থকদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেন তিনি।
অভিনেতা থেকে রাজনৈতিক নেতা হয়ে ওঠা বিজয় নেতৃত্ব দিচ্ছেন তামিলাগা ভেত্রি কাজাগাম (টিভিকে) দলকে। সম্মেলনে বিপুল জনসমাগমের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “একটি সিংহ ভিড়ের মধ্যে থাকতে জানে, আবার একা থাকতে জানে। কিন্তু সিংহ কখনো বিনোদনের জন্য নয়, শুধুমাত্র শিকারের জন্য বের হয়।” বিজয়ের এই বক্তব্যকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বিজেপির বিরুদ্ধে তার অবস্থানকে প্রতীকী ও শক্তিশালী বার্তা হিসেবে দেখছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি তামিলনাড়ুর সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য ও সামাজিক বাস্তবতা উপেক্ষা করছে। এমনকি রাজ্যের শাসক দল ডিএমকে-র প্রতিও তার ক্ষোভ প্রকাশ পায়, যাদের বিরুদ্ধে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে গোপন সমঝোতার অভিযোগ তোলেন। তবে স্পষ্ট করে জানান, তার দল কোনোভাবেই বিজেপির সঙ্গে জোট করছে না।
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সরাসরি আক্রমণ করে বিজয় বলেন, “এনইইটি বাতিল করুন! আপনি কি সেটা করতে পারবেন, নরেন্দ্র মোদি আগরওয়াল?” তার অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার একগুঁয়েমির কারণে এই পরীক্ষা চাপিয়ে দিচ্ছে, যার ফলে তামিলনাড়ুর অসংখ্য শিক্ষার্থী ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বিজয়ের দাবি, এনইইটি পরীক্ষার ফলে গ্রামীণ ও সাধারণ পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ হারাচ্ছে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি আঞ্চলিক চাহিদা ও সমস্যাকে উপেক্ষা করা হয়, তবে কেন্দ্রকে এর “রাজনৈতিক মূল্য” দিতে হবে।
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে টিভিকে। বিজয় নিজেকে এবং তার দলকে তুলে ধরেছেন জনগণের স্বার্থ রক্ষাকারী একটি শক্তি হিসেবে। বিশাল জনসমাগমে তার বক্তৃতাকে অনেকেই টিভিকে-র ভবিষ্যৎ রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিজয়ের সরাসরি ভাষণ এবং বিজেপিকে একমাত্র আদর্শিক শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করার ঘোষণা শুধু জনসমর্থন বাড়াবে না, বরং রাজনীতির ময়দানে বিজেপির জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
তামিলনাড়ুর রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে আঞ্চলিক দলগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বিজয়ের আবির্ভাব একটি নতুন মাত্রা তৈরি করেছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি শুধু একজন সুপারস্টার নন, বরং সম্ভাব্য রাজনৈতিক বিকল্প। বিজেপির বিরুদ্ধে এই তীব্র আক্রমণাত্মক অবস্থান তাকে রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
বিজয়ের এই হুঁশিয়ারি কেবল রাজনৈতিক ভাষণ নয়, বরং তামিলনাড়ুর জনগণের অন্তর্গত ক্ষোভের প্রতিফলন হিসেবেই ধরা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, বিজেপি কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এবং ২০২৬ সালের নির্বাচনে এই সংঘাত কোন দিকে মোড় নেয়।