সিলেটের ভোলাগঞ্জে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন সরাসরি অভিযান শুরু করছে। স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের জড়িত থাকার অভিযোগও উঠে এসেছে।
সিলেটের ভোলাগঞ্জ এলাকায় রাষ্ট্রীয় সম্পদের অবাধ লুটপাট বন্ধে অবশেষে মাঠে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে দুদকের সিলেট সমন্বিত কার্যালয়ের কর্মকর্তারা সরাসরি এ অভিযানের নেতৃত্ব দেবেন। দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই অভিযান হবে হঠাৎ ও সরাসরি, যাতে অভিযুক্তরা পালানোর সুযোগ না পায় এবং রাষ্ট্রের ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদ দ্রুত উদ্ধার করা যায়।
দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) তানজির আহমেদ কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, স্থানীয় প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও পাচার করে আসছে। এর ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কমিশন বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এবং ইনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
তিনি আরও জানান, এই অভিযানে কেবল অবৈধভাবে উত্তোলিত পাথর জব্দই নয়, বরং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর জন্য ইতোমধ্যেই স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে সহযোগিতার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযানে দুদকের একাধিক টিম মাঠে কাজ করবে এবং প্রয়োজনে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতেও নজরদারি জোরদার করা হবে।
এর আগে মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রাতের একটি এক্সক্লুসিভ ভিডিওতে দেখা যায়, শত শত ট্রাক ভোলাগঞ্জ এলাকা থেকে পাথর বোঝাই করে সরিয়ে নিচ্ছে। ভিডিওটি দৈনিক কালবেলা প্রকাশ করলে বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দিনের পর দিন রাতের আঁধারে প্রশাসনের নাকের ডগায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ পাচার করা হচ্ছে, অথচ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকা থেকে পাথর উত্তোলন সরকারি নীতিমালা মেনে হওয়া উচিত, কিন্তু সেখানে চক্রবদ্ধভাবে অবৈধভাবে উত্তোলন চলছে। এমনকি পাথর উত্তোলনের জন্য অনুমোদিত সীমা অতিক্রম করে নদীর তলদেশ ও সংরক্ষিত এলাকায়ও খনন চালানো হচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, এই অভিযানে শুধুমাত্র অবৈধভাবে মজুত পাথর জব্দই নয়, বরং চিহ্নিত দোষীদের গ্রেপ্তারেরও পরিকল্পনা রয়েছে। কমিশন স্পষ্ট করেছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের ঘটনায় জড়িতদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, দুদকের এই পদক্ষেপ সিলেট অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চলমান অবৈধ পাথর ব্যবসার বিরুদ্ধে একটি বড় সতর্কবার্তা। যদি অভিযান সফল হয়, তবে এটি ভবিষ্যতে এমন অপরাধ প্রতিরোধে নজির হয়ে দাঁড়াতে পারে।