সিলেট অঞ্চলে বিগত কয়েকদিন ধরে টানা অতিবৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের ফলে নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুরমা ও কুশিয়ারাসহ আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। বিশেষ করে গোয়াইনঘাট-রাধানগর উপজেলা সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। শনিবার দুপুর থেকে সিলেট নগরীতে টানা বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সিলেটে ১৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা নগরীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে। ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতেও পানি ঢুকে পড়েছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) এই অবস্থার মোকাবেলায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। একটি বিশেষ জরুরি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সিসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর জানান, 'আমরা বৃষ্টির পানি দ্রুত অপসারণের জন্য কাজ করছি।' সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিস্থিতির উন্নতির প্রচেষ্টা চলছে। সিসিকের একজন অফিস আদেশে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে পরিস্থিতি সরাসরি পরিদর্শন করবেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই ভারী বৃষ্টির কারণে নগরীর বিভিন্ন স্থান যেমন জিন্দাবাজার, ক্বিন ব্রিজ এলাকা, আম্বরখানা, বন্দরবাজার, টিলাগড়, উপশহর, লালদিঘীরপাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় হাঁটু পানি জমে গেছে। অনেক বাসায় পানি ঢুকে পড়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও পুনর্বাসন কেন্দ্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে সিলেটের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। সুরমা, কুশিয়ারা, ধলাই, পিয়াইন ও সারি নদীসহ সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটের সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানির স্তর ১১ দশমিক ৬৬ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিপদসীমার ১২ দশমিক ৭৫ মিটার থেকে সামান্য কম। সীমান্তের পাহাড়ি নদীগুলোতেও দ্রুত পানি বাড়ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন বলেন, 'গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সিলেটে ভারী বর্ষণ ও দমকা হওয়া অব্যাহত রয়েছে। আগামী তিন দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস রয়েছে।' ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা সিলেটের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেটের সকল নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
close
কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!
לא נמצאו הערות