close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

ষষ্ঠবারের মতো ভাঙছে জাতীয় পার্টি

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
The Jatiya Party faces another major split as leadership disputes spark parallel council calls, fueling intense political tension in Bangladesh.

জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব সংকট আবারও ভাঙনের মুখে ঠেলে দিয়েছে দলটিকে। আদালতে মামলার পর পক্ষ-বিপক্ষের কাউন্সিল ডাকায় রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতৃত্ব নিয়ে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব ষষ্ঠবারের মতো দলটিকে ভাঙনের মুখে দাঁড় করিয়েছে। দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে বিরোধী পক্ষ আজ শনিবার জাপার নামে আলাদা কাউন্সিলের আয়োজন করছে। তবে কাদেরের নিয়োগপ্রাপ্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এই কাউন্সিলকে সম্পূর্ণ অবৈধ ঘোষণা করেছেন।

গত চারটি জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে অংশ নেওয়ার কারণে বিরোধীরা জাপাকে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ হিসেবে সমালোচনা করে আসছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮৬ সালে দলটি গঠনের পর তাঁর জীবদ্দশায় চারবার বিভক্ত হয়েছিল। এরশাদের মৃত্যুর পর ২০১৯ সালে জি এম কাদের নেতৃত্বে আসার পর দলটি আরেকবার ভাঙন দেখে।

গত বছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর রওশন এরশাদের নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা একই নামে নতুন শাখা গঠন করেন। এরপর জুলাই মাসে শেখ হাসিনার পতনের পর জি এম কাদের অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন জানান। কিন্তু ছাত্র নেতৃত্বের প্রবল আপত্তির মুখে সরকারি বৈঠকে জাপাকে আমন্ত্রণ জানানো বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি ‘স্বৈরাচারের দোসর’ আখ্যা দিয়ে দলীয় কার্যালয় ও কর্মসূচিতে হামলাও হয়। পরবর্তীতে কাদের সরকারবিরোধী সমালোচক হিসেবে আবির্ভূত হন।

এ অবস্থায় আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে পরিচিত এবং শেখ হাসিনার আমলে মন্ত্রী-এমপি থাকা জাপার একাংশ দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০(১) ‘ক’ ধারা সংশোধনের দাবি তোলে। কাদেরের নেতৃত্বে মে মাসে জাপার প্রেসিডিয়াম সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ২৮ জুন দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার কর্মসূচির কারণে ভেন্যু না পাওয়ার অজুহাতে কাদের সেই কাউন্সিল স্থগিত করেন।

স্থগিতের পর দলটির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারসহ বেশ কয়েকজনকে সকল পদ থেকে অব্যাহতি দেন কাদের। গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে আরও চারজন প্রেসিডিয়াম সদস্যকেও বহিষ্কার করা হয়। এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ১০ জন নেতা আদালতে মামলা করেন এবং আদালত কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেন।

বিরোধী শিবিরের কাউন্সিল ঘোষণা
এই পরিস্থিতিতে নিজেকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দাবি করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আজকের কাউন্সিল আহ্বান করেছেন। গতকাল গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “কাউন্সিলের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের বিভেদ মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাপা নতুন যাত্রা শুরু করবে।” তাঁর দাবি, এটি কোনো ভাঙন নয়, বরং আদালতের আদেশ ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নেওয়া সাংগঠনিক পদক্ষেপ। নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করা হয়েছে এবং তাদের প্রতিনিধি পাঠানোর জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

আনিসুল ইসলাম বলেন, গঠনতন্ত্রের বিতর্কিত ধারা বাতিল করে যৌথ নেতৃত্বে দল পরিচালিত হবে। একই অনুষ্ঠানে মুজিবুল হক চুন্নু জানান, আদালতের নিষেধাজ্ঞায় সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছিল। রাজনৈতিক বাস্তবতা ও নির্বাচন কমিশনের সময়সীমা মেনে ৫ আগস্ট প্রেসিডিয়াম সভায় সর্বসম্মতভাবে কাউন্সিল আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়।

রুহুল আমিন হাওলাদার মনে করেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে, জাপা সেই প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে এগোচ্ছে। রওশনপন্থি শিবিরে যোগ দেওয়া সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাও এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে কাকরাইলে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শামীম হায়দার পাটোয়ারী অভিযোগ করেন, বহিষ্কৃত নেতারা কোনোভাবেই কাউন্সিল ডাকতে পারেন না। আদালতের আদেশে তাদের বহিষ্কার প্রত্যাহার করা হয়নি। শুধুমাত্র চেয়ারম্যান ও দপ্তর সম্পাদককে দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

শামীম হায়দার আরও বলেন, অতীতে যারা জাতীয় পার্টি ভেঙেছে, তারা শেষ পর্যন্ত সীমিত আসনের ছোট দলে পরিণত হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, “বর্তমানে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই; মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের সদিচ্ছা ও সক্ষমতা থাকা জরুরি। তা দেখা গেলে জাপা নির্বাচনে অংশ নেবে।”

ফলে জাতীয় পার্টির ভেতরে এই দ্বন্দ্ব নতুন করে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। অনেকের মতে, ষষ্ঠবারের মতো ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা এই দলটির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আজকের কাউন্সিল ও আদালতের পরবর্তী নির্দেশনার ওপর।

No comments found