করোনা মহামারির সময় পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির লটারি পদ্ধতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার শিক্ষক ও অভিভাবকরা। তারা বলছেন, করোনাকালীন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে চালু হওয়া এই পদ্ধতি বর্তমান বাস্তবতায় অনুপযুক্ত ও অকার্যকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২১ সালে কোচিং বাণিজ্য, ভর্তি পরীক্ষার চাপ ও অসমতা দূর করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সারাদেশে ষষ্ঠ শ্রেণিতে লটারি পদ্ধতি চালু করা হয়। যদিও শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিলেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। তাদের অভিযোগ, মেধাবী শিক্ষার্থীরা প্রতি বছরই এই ব্যবস্থায় উপেক্ষিত হচ্ছে।
কসবা পৌর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো:সালাউদ্দিন বলেন, লটারির মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর ভাগ্য নির্ধারিত হয়, কিন্তু তার প্রকৃত মেধার কোনো মূল্যায়ন হয় না। আমার বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি ফরম বিতরণ হয় প্রায় ৭০০ তবে আমরা লটারির মাধ্যমে মাত্র ২৬৫ জন ভর্তি করাতে পারি এতে করে মেধাবীরা ভর্তি পরীক্ষা না থাকায় সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছেনা।
কসবা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক শফিকুর রহমান বলেন, আমি লটারি পদ্ধতির একেবারেই বিপক্ষে,কেননা; লটারি হলো একটি ভাগ্য পরিক্ষা,একটা শিক্ষার্থী শুধুমাত্র ভাগ্যের উপরে একটি ভালো স্কুলে ভর্তি হতে পারেনা। আগে আমরা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে অনেক ভালো শিক্ষার্থী পেতাম,বর্তমানে এমন শিক্ষার্থী পাচ্ছি যারা ভালো করে বর্ণমালাও লিখতে পারেনা।
অভিভাবকরাও এই পদ্ধতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে তাদের সন্তানরা প্রতিনিয়ত প্রস্তুতি নেয়, অথচ শুধুমাত্র লটারি পদ্ধতির কারণে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। তারা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই পদ্ধতি তুলে দিয়ে আগের মতো ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা যাচাই করা উচিত।
উপজেলার আকছিনা গ্রামের আনিসুর রহমান বলেন, আমার মেয়েটাকে গতবছর কসবা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে চেয়েছিলাম,সে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত খুবই ভালো ফলাফল করেছিল,ভর্তি পরীক্ষা দিলেও প্রথমই হতো। শুধুমাত্র লটারির কারণে মেয়েটাকে ভর্তি করাতে পারিনি। বাবা হিসেবে আমিও হতাশ ও আমার মেয়েটারও ইচ্ছে ভঙ্গ হয়েছে। তাই অভিভাবক হিসেবে দাবি করব এই লটারি পদ্ধতি যেন সরকার তুলে দিয়ে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে।
মরাপুকুরপাড় গ্রামের অভিভাবক আকলিমা আক্তার বলেন, আমার মেয়েটা প্রাথমিকে অনেক ভালো শিক্ষার্থী ছিল,আমার স্বপ্ন ছিল তাকে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করাব,সেখানে শিক্ষার মান অনেক ভালো,তবে লটারির কারণে সে এখন একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে,এতে আমাদের পরিশ্রমের মূল্যায়ন পাইনি। তাই বর্তমান সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে,সামনে থেকে যেন এই লটারি পদ্ধতি বাতিল করা হয়।
এ বিষয়ে কসবা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তৌহিদ জানান, সরকারি নির্দেশনার বাইরে গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে মাঠ পর্যায়ের অভিভাবক ও শিক্ষকদের মতামত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচরে আনা হবে।
সবমিলিয়ে শিক্ষার্থী নির্বাচন পদ্ধতিতে ভাগ্যের লটারি নয়, মেধার মূল্যায়ন চান কসবার শিক্ষক-অভিভাবকরা। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে লটারি পদ্ধতি বাতিল করে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা।