close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

শ্যামনগরে জলজ উদ্ভিদের মেলা

Ranajit Barman avatar   
Ranajit Barman
গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র সহায়তায় ব্যতিক্রমী জলজ উদ্ভিদবৈচিত্র্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ..

শ্যামনগরে জলজ উদ্ভিদের মেলা

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর( সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি :

প্রকৃতির সাথে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক। আর এ প্রকৃতিতে আছে নানান প্রাণবৈচিত্র্য। যা ঝোপ-ঝাড়, আনাচে-কানাচে, ডোবা-নালায়, খাল-বিল- পুকুর সহ পতিত স্থানে অনাদর, অবহেলা, অযত্নে বেড়ে উঠেছে। এ সকল প্রাণও উদ্ভিদবৈচিত্র্য মানুষ খাদ্য ও চিকিৎসার কাজে যেমন ব্যবহার করছে তেমনি ভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্যান্য কর্মকান্ডের ব্যবহার হচ্ছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো জলজ উদ্ভিদ যার বেশির ভাগই পানিতে জন্মে। 
জলজ উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের স্থায়িত্বশীল ব্যবহার ও সংরক্ষণে জনসচেতনতা তৈরিতে বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) উপকূলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম জেলেখালী শাপলা কিশোরী সংগঠন ও সবুজ সংহতির যৌথ উদ্যোগে এবং  বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র সহায়তায় ব্যতিক্রমী জলজ উদ্ভিদবৈচিত্র্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলায় পশ্চিম জেলেখালী গ্রামের কিশোরীরা ৪টি গ্রুপে ভাগ হয়ে উপকুলীয় এলাকার পানিতে যেসকল উদ্ভিদ জন্মে যেমন ঢ্যাব, শাপলা, শালুক, শেওলা, টোপরপনা, ইদুরকানী, কলমি, হেলাঞ্চ, আদাবরুন, চিচো, লজ্জাবতি, জলপানকচু, ঘাস, মেলে, ছাতেম, নল খাগড়া সহ প্রায় ৩৫ ধরনের জলজ উদ্ভিদ তাদের এলাকা বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ  করে নিয়ে প্রদর্শনী করেন। প্রদর্শনীতে  জলজ উদ্ভিদের প্রাপ্তিস্থান, গুণাবলী, ব্যবহার, কোন মৌসুমে কি কি পাওয়া যায়, কোনটি মানুষ ও প্রানীর ঔষধ হিসাবে ব্যবহার হয়, এগুলোর হারিয়ে যাওয়ার কারণ এবং পরিবেশের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ন এসব বিষয় তুলে ধরেন প্রদর্শনকারীরা।

মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন সবুজ সংহতির সভাপতি ডাঃ যোগেশ চন্দ্র মন্ডল এর সভাপতিত্ত্বে মেলায় অংশগ্রহনকারী দর্শনার্থীদের উদ্দেশ্যে উপকুলীয় অঞ্চলের জলজ উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের স্থায়িত্বশীল ব্যবহার ও সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন মুন্সিগঞ্জ ইউপি সদস্যা ও সাতক্ষীরা জেলা রেড ক্রিসেন্ট এর আজীবন সদস্য নীপা চক্রবর্তী, ধুমঘাট নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিভূতি মাঝী, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাছুম বিল্লাহ, কৃষক ভুধর চন্দ্র মন্ডল ও দেবীরঞ্জন মন্ডল, শিক্ষার্থী অন্যন্যা রাণী ও ধৃতিমা মন্ডল, প্রবীন নাগরিক গংগারাম মাঝী, বারসিক কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ জোয়ারদার ও বিশ^জিৎ মন্ডল। এ ছাড়াও উক্ত মেলায় এলাকার কৃষক-কৃষানী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, যুব, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহন করেন।
মেলায় স্টল প্রদর্শনকারী অন্যান্য রানী বলেন 
আমার দিদিমা-ঠাকুরমার কাছে শুনেছি আমাদের এলাকাতে প্রচুর পরিমানে জলজ উদ্ভিদ বৈচিত্র্য ছিলো। যাহার অনেকটা পানিতে হতো। কিন্তু আমাদের এলাকায় ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও লবন পানির প্রবেশের কারণে তা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সাথে এগুলোর যে প্রাপ্তি স্থল তাও নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরেও  আমাদের এলাকায় এখনো অনেক ধরনের জলজ উদ্ভিদ বৈচিত্র্য টিকে আছে এগুলো টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। তার জন্য আমাদের সকলের পরিবার থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।”

স্থানীয় কৃষক তারাপদ গাঁতীদার (৬৯) বলেন, ‘উপকুলীয় এলাকায় প্রতিনিয়ত জলবায়ু পরিবর্তন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার ও মনুষ্য বসতি স্থাপন বৃদ্ধিতে পতিত জায়গার সংকট সৃষ্টি হওয়ায় এ সকল প্রাণবৈচিত্র্য অনেকাংশে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এ সকল উদ্ভিদ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণে ব্যক্তি ও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা রকম উদ্যোগ, নানান কর্মকান্ড গ্রহন করা দরকার। কেননা এসব উদ্ভিদগুলো জলজ প্রানী, মানুষ ও গবাদিপশুর খাদ্যভান্ডার হিসেবে কাজ করে।’

আমন্ত্রিত অতিথিরা বলেন, ‘আমাদের উপকূল একসময় ছিলো প্রাণবৈচিত্র্যের সমাহার। কালের বিবর্তনে তা আজ বিলুপ্তির পথে। আর তার মূল কারণ হলো লবনাক্ততা। দিনে দিনে লবনাক্ততা বৃদ্ধির কারণে সকল প্রাণবৈচিত্র্য কমতে শুরু করেছে। আর এসকল প্রাণবৈচিত্র্যের মধ্যে জলজ উদ্ভিদ অন্যতম। পানি না থাকলে বেশির ভাগ জলজ উদ্ভিদ জন্মাতই না, কিছু কিছু জন্মাতো কিন্তু বাঁচতে পারত না কিংবা বাঁচলেও তা বেড়ে উঠতে পারত না। আর তখন পরিবেশের বিপর্যয় ঘটতো। এসকল জলজ উদ্ভিদ না থাকলে মাছসহ অনেক জলজ প্রানী বাঁচতে পারেনা, যেটি পরিবেশের জন্য মারাত্নক হুমকির কারণ। তাই আমাদের পরিবেশের ভারসম্য রক্ষার জন্য জলজ উদ্ভিদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
উপস্থিত সকলেই বেঁচে থাকা নয়, মানুষ সহ সকল জীবের বেঁচে থাকার পাশাপাশি প্রকৃতির সকল উপদান টিকিয়ে রাখার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হন।

ছবি - শ্যামনগরে জলজ উদ্ভিদ মেলা। 

No comments found


News Card Generator