জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক বলেছেন, শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে ব্যবহার করা অন্যায় ও জুলুম। রাজনৈতিক স্বার্থে ছাত্রদের ব্যবহার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে ব্যবহারকে অন্যায় ও নির্লজ্জ জুলুম হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থের জন্য কোমলমতি ছাত্রদেরকে ব্যবহার করা তাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করার শামিল। শিক্ষার্থীদের প্রকৃত কাজ হলো পড়াশোনা ও নিজেদের যোগ্যতা বৃদ্ধি করা, কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হিসেবে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে, যা কোনোভাবেই ন্যায়সঙ্গত নয়।
শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত ইনসাফ ফাউন্ডেশনের আত্মপ্রকাশমূলক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। সেমিনারের মূল প্রতিপাদ্য ছিল— “নারীর অধিকার ও মর্যাদা; বর্তমান বাস্তবতা : আমাদের করণীয়।”
নিজ বক্তব্যে মাওলানা আবদুল মালেক স্পষ্টভাবে বলেন, “আমি যদি বলি, হয়তো অনেকের কাছে অবাক লাগতে পারে। কিন্তু বাস্তব সত্য হলো, ছাত্রদের রাজনীতিতে ব্যবহার করা তাদের প্রতি একটি নির্মম জুলুম। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে, অথচ তাদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস হচ্ছে। এমনকি ইসলামী দলের ছাত্র সংগঠনগুলোও একই কাজ করছে। এটি কখনোই সঠিক নয়, বরং শিক্ষার্থীদের উপর ভয়াবহ অন্যায়।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ছাত্রসমাজ জাতির মেরুদণ্ড। তাদের কাঁধেই ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র গড়ার দায়িত্ব। কিন্তু যখনই তারা রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে ওঠে, তখন সমাজে অস্থিরতা তৈরি হয় এবং শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়। এ অবস্থায় তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন ভেঙে যায়, অনেকেই পথভ্রষ্ট হয়ে যায়।
সেমিনারে তিনি শুধু ছাত্ররাজনীতি নয়, বরং সমাজের সর্বস্তরের অধিকার, মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার আহ্বান জানান। বিশেষ করে নারী সমাজের নিরাপত্তা ও সামাজিক অবস্থান নিশ্চিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার তাগিদ দেন।
সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনসাফ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক শাইখুল হাদীস মাওলানা আবুল বাশার। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি মুফতি মাহমুদুল হাসান। এতে আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও শিক্ষাবিদরা। বক্তাদের মধ্যে ছিলেন মাওলানা আহমেদুল হক, অধ্যাপক ড. লুতফুল কবির, অধ্যাপক মাওলানা ড. এবিএম হিজবুল্লাহ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সাঈদ মাসুদ, ড. মুহাম্মদ নাজিবুর রহমান, মুফতি কেফায়েতুল্লাহ, মাহমুদুল হাসান সোহাগ ও মাওলানা হাবিবুর রহমান।
বক্তারা তাদের বক্তব্যে নারীর অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা এবং মর্যাদা রক্ষার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বলেন, একটি সভ্য সমাজ গড়তে হলে নারী-পুরুষ উভয়ের অধিকার সমানভাবে নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে তারা শিক্ষার্থীদের সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশপ্রেমিক ও নৈতিক শিক্ষায় সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
মাওলানা আবদুল মালেকের এই বক্তব্য সমাজে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও জাতীয় মসজিদের খতিবের এমন সরাসরি মন্তব্যে অনেকেই নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখলে তারা শিক্ষা ও গবেষণায় মনোনিবেশ করতে পারবে, যা দেশের উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
অন্যদিকে সেমিনারের বক্তারা আরও মনে করিয়ে দেন, শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, পুরো জাতির জন্যই প্রয়োজন একটি ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। যেখানে নারী-পুরুষ সবার অধিকার নিশ্চিত হবে এবং তরুণ প্রজন্ম নিজেদের যোগ্যতা বিকাশের পূর্ণ সুযোগ পাবে।
সব মিলিয়ে সেমিনারটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে—শিক্ষার্থীদের রাজনীতির শিকার না করে, বরং তাদেরকে জ্ঞান, নৈতিকতা ও দেশপ্রেমে গড়ে তুলতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রের সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য এই সচেতনতা এখন সময়ের দাবি।