এনসিপি নেতা আবদুল হান্নান মাসউদ অভিযোগ করেছেন, সরকার শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে উপেক্ষা করে কেবল নির্বাচনী রাজনীতিতে মনোযোগ দিচ্ছে এবং পুলিশ এখনো আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর ফ্যাসিস্ট আচরণ করছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ অভিযোগ করেছেন, বর্তমান সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার দিকে কোনো নজর না দিয়ে কেবল নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়েই ব্যস্ত। তার মতে, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যখন ন্যায্য অধিকার আদায়ে আমরণ অনশনে বসেছে, তখন সরকারের উদাসীনতা কেবল হতাশাজনকই নয়, বরং গণতান্ত্রিক দায়িত্ববোধের চরম ব্যর্থতার উদাহরণ।
সোমবার (১১ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক কর্মসূচিতে তিনি এই বক্তব্য দেন। তিনি সেখানে উপস্থিত হয়ে ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, বরিশাল ও সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র কমিশন গঠন ও শিক্ষা ব্যবস্থায় কাঠামোগত সংস্কারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।
হান্নান মাসউদ বলেন, "অভ্যুত্থানের পর এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মধ্যে আটকে গেছে। মন্ত্রণালয়গুলো আমলাদের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যার ফলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের পরিবর্তে কাগুজে প্রশাসনই কার্যক্রম নির্ধারণ করছে।"
তিনি অভিযোগ করেন, যারা অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করে সরকারের পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছিল, তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা যে যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত দাবি তুলে ধরছে, সেটিকে সমাধানের পরিবর্তে সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে দমন করার চেষ্টা করছে।
তার ভাষায়, "ছাত্রদের আন্দোলনে পুলিশের আচরণ সম্পূর্ণ ফ্যাসিস্ট ধাঁচের। ন্যায়সংগত দাবিকে উপেক্ষা করে লাঠিচার্জ, গ্রেফতার এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন চলছে, যা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অগ্রহণযোগ্য।"
তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। তার মতে, নির্বাচন শুধু রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার লড়াইয়ের মঞ্চ নয়, বরং এটি জনগণের আস্থা অর্জনের একটি প্রক্রিয়া। জনগণকে উপেক্ষা করে কেবল ভোটের প্রস্তুতিতে মনোযোগ দিলে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকট আরও গভীর হবে।
হান্নান মাসউদ আরও বলেন, "আমাদের দেশের উন্নয়ন নির্ভর করছে শিক্ষিত, দক্ষ ও নৈতিকতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের ওপর। আজ যদি আমরা তাদের কথা না শুনি, তাদের দাবিকে অগ্রাহ্য করি, তবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশও অন্ধকারের পথে যাবে।"
প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে উপস্থিত অন্যান্য এনসিপি নেতারাও শিক্ষার্থীদের অনশন কর্মসূচিকে সমর্থন জানান এবং সরকারের প্রতি দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান করেন। তারা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতি শুধু শিক্ষাক্ষেত্র নয়, গোটা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
এদিকে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, যতদিন না তাদের দাবিগুলো পূরণ করা হচ্ছে, ততদিন তারা অনশন চালিয়ে যাবেন। তাদের দাবি, স্বতন্ত্র কমিশন গঠন ও শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠন ছাড়া মানসম্মত ও ন্যায়সঙ্গত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন অবহেলা করলে সরকারের জন্য বড় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকট তৈরি হতে পারে। তারা সতর্ক করে বলেছেন, নির্বাচনী ব্যস্ততার আড়ালে জনগণের দাবি উপেক্ষা করা গণআন্দোলনের নতুন ঢেউ ডেকে আনতে পারে।