মাইলস্টোন কলেজে বিমান দুর্ঘটনার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের সব দাবি যৌক্তিক বলে মেনে নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শুরু হচ্ছে ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও তথ্যকেন্দ্র চালু কার্যক্রম।
ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবি পুরোপুরি যৌক্তিক বলে স্বীকৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই স্বীকৃতি ও আশ্বাসের খবরটি এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে প্রকাশিত এক সরকারি বিবৃতির মাধ্যমে।
বিবৃতিতে বলা হয়, মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্যাম্পাসে সরাসরি উপস্থিত হন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন শীর্ষ উপদেষ্টা। এরা হলেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তারা আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আলোচনা করেন এবং প্রত্যেকটি দাবি মনোযোগ দিয়ে শোনেন।
আলোচনার শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা একটি তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করেছি যেখানে দুর্ঘটনায় নিহত, আহত কিংবা নিখোঁজদের সর্বশেষ তথ্য আপডেট করা হচ্ছে। প্রতিটি পরিবার যাতে নির্ভরযোগ্য তথ্য পায় এবং বিভ্রান্ত না হয় সেজন্য এই কেন্দ্র নিয়মিত তথ্য প্রকাশ করছে।” তিনি আরও জানান, সরকার ইতিমধ্যেই ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও ট্রমা ম্যানেজমেন্টের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য কর্তৃক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর মারধরের ঘটনায় সরকার দুঃখপ্রকাশ করেছে। আইন উপদেষ্টা জানান, “ঘটনার তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।”
বিমান চলাচলের নিরাপত্তা নিয়েও শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করলে, উপদেষ্টারা জানান যে জনবহুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অধ্যুষিত এলাকায় যাতে কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়ন না করে সে বিষয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়ার সুপারিশ করা হবে।
শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, “আমরা চাই শিক্ষার্থীরা নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ফিরে যাক। আগামী ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ নিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ থাকলেও আমরা আশ্বস্ত করছি, পরীক্ষা যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে এবং যেকোনো পরিবর্তনের তথ্য যথাসময়ে জানানো হবে।”
উল্লেখ্য, এই দুর্ঘটনার ফলে এখনও পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছে ১৬৪ জন। এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে সরকার জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেছে। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন এবং গঠনমূলক দাবিকে সরকার ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কৃতিতে একটি বড় ইতিবাচক বার্তা।
সরকারের এমন পদক্ষেপে শিক্ষার্থীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছে এবং আশা করছে—দ্রুততার সঙ্গে প্রতিটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হবে।