সিনিয়র সাংবাদিক এম এ আজিজ সতর্ক করে বলেছেন, ডাকসু নির্বাচনে শিবির জয়লাভ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনমুখী ঐতিহাসিক চরিত্র পাল্টে যাবে এবং জাতীয় আন্দোলনের ধারাও থেমে যাবে।
সিনিয়র সাংবাদিক এম এ আজিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, যদি কোনোভাবে ইসলামী ছাত্রশিবির এই নির্বাচনে বিজয়ী হয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক ও আন্দোলননির্ভর চরিত্র পুরোপুরি বদলে যাবে। তার মতে, শিবিরের নেতৃত্বে থাকলে আর কোনো জাতীয় আন্দোলন গড়ে উঠবে না, ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর দেশের আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে টিকে থাকতে পারবে না।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে অংশ নিয়ে এম এ আজিজ এ মন্তব্য করেন। আলোচনার একপর্যায়ে তিনি বলেন, “জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের কোনো যৌক্তিকতা ছিল না। চাইলে এই নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের পরেও করা যেত। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর হঠাৎ করে দেখা গেল শিবির পরিচয়ে কিছু শিক্ষার্থী সক্রিয় হয়ে উঠছে। অথচ ডাকসু নির্বাচনের উদ্দেশ্য হলো প্রকাশ্য রাজনীতিকে এগিয়ে নেওয়া, কোনো গুপ্ত রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানো নয়।”
তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, “কে শিবির আর কে নয়, তা বোঝার উপায় কী? কেউ যদি বলে আমি শিবির করি না—এর প্রমাণ কীভাবে মিলবে? এই দ্ব্যর্থক পরিস্থিতিই বড় ধরনের আশঙ্কার কারণ।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ভূমিকাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে এম এ আজিজ বলেন, “কেন এত তাড়াহুড়ো করে এই নির্বাচন করা হলো? এখানে তো কোনোভাবেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও শিবির—সবাই নিজ নিজ প্যানেল দিয়েছে। যদি কোনো ধরনের সহিংসতা ঘটে, তবে এর সরাসরি প্রভাব জাতীয় নির্বাচনের ওপর পড়বে। এতে করে পুরো রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
এম এ আজিজ জাতীয় প্রেক্ষাপটের সঙ্গে বিষয়টিকে যুক্ত করে সতর্ক করে বলেন, “যেখানে যেখানে বিএনপির প্রার্থী আছে, বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা প্রার্থী—সেসব আসনে জামায়াতের লোকজনকে বসানো হয়েছে। এই রাজনৈতিক অবস্থান অত্যন্ত ভয়াবহ। কারণ, যদি কখনো জামায়াত ক্ষমতায় আসে, তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ আর টিকে থাকতে পারবে না।”
তিনি আরও যোগ করেন, ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে যদি কোনো উগ্রপন্থী সংগঠন প্রভাব বিস্তার করে, তবে কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা নয়, পুরো রাষ্ট্রীয় কাঠামোও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করবে।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে সাংবাদিক এম এ আজিজ একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক চরিত্র রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন, অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে অস্থিরতার ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। তার মতে, ডাকসু নির্বাচন কেবল একটি ছাত্রসংসদ নির্বাচন নয়; এটি বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করতে পারে।