বরগুনা সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’সহ আওয়ামী লীগের চার শতাধিক বই শিক্ষার্থীরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছে। আন্দোলনের পরও এসব বই লাইব্রেরিতে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ।
বরগুনা সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে এক নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’সহ আওয়ামী লীগের প্রায় চার শতাধিক বই একত্রিত করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছে তারা। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কলেজ চত্বরে এই ঘটনাটি ঘটে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্ট দীর্ঘ আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। সেই সময় থেকেই দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চিহ্ন, প্রতীক ও প্রচারসামগ্রী সরিয়ে ফেলা হয়। তবে বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের লাইব্রেরিতে এখনো শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের প্রভাববিস্তারকারী বহু বই সংরক্ষিত ছিল। শিক্ষার্থীদের দাবি, এই বইগুলো সচেতনভাবে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবদুল বলেন, “লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধুর কিছু বই রয়ে গিয়েছিল। অথচ গত ৫ আগস্টের পর এগুলো থাকার কথা নয়। শিক্ষার্থীরা বারবার স্যারদের কাছে জানতে চেয়েছিল বই আছে কিনা। কিন্তু তারা বলেছিলেন বইগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পরে আমরা খুঁজে পেয়ে বইগুলো কলেজের সামনে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দিই।”
অন্যদিকে, বরগুনা পলিটেকনিক ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শিহাব হোসাইন বলেন, “কলেজের চার তলার একটি রুম থেকে শেখ মুজিবের গল্পনির্ভর বইসহ চার শতাধিক বই বের করা হয়। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে বইগুলো সংগ্রহ করে আগুনে ভস্মীভূত করে।”
ঘটনা নিয়ে বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অনিল চন্দ্র কীর্তুনিয়া বলেন, “আমি মাত্র দেড় মাস আগে দায়িত্ব নিয়েছি। পূর্ববর্তী অধ্যক্ষ আমাকে জানিয়েছিলেন যে সম্মুখে কোনো বই নেই। পরীক্ষা চলছিল বলে আমি পূর্ণভাবে খোঁজ নিতে পারিনি। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই লাইব্রেরি থেকে বই বের করে আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ছাত্র আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগের পতনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষাঙ্গনে দলীয় প্রভাবের নানা চিহ্ন রয়ে গেছে। বই পোড়ানোর এই ঘটনা শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক ক্ষোভ ও বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ। অনেকের মতে, শিক্ষার্থীরা এভাবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার বার্তা দিতে চেয়েছে।
এই ঘটনার পর বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এলাকায় তীব্র আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো রাজনৈতিক বই বা প্রভাব থাকা উচিত নয়। অন্যদিকে, একটি অংশ মনে করছে বই পোড়ানো সভ্যতার জন্য অগ্রহণযোগ্য। তবে সামগ্রিকভাবে এই ঘটনাকে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতারই প্রতিফলন বলে মনে করছেন অনেকেই।