জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ মুজিব গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেন। তার বিপরীতে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও সংস্কারের ধারক ছিলেন জিয়াউর রহমান।
শেখ মুজিবই ছিলেন ফ্যাসিবাদের জনক, বাকশাল ছিল গণতন্ত্রের কবরস্থান—বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বিস্ফোরক মন্তব্য
জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ফ্যাসিজমের মূল ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র ধ্বংস করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করেন।” এই বক্তব্যে তিনি সরাসরি শেখ মুজিবকে ফ্যাসিজমের ‘মূল হোতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শফিউল বারী বাবুর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আজ যারা আমাদের সংস্কার বিরোধী বলে কটাক্ষ করেন, তারা ইতিহাস জানেন না বা জানার চেষ্টা করেন না। বাস্তবতা হলো, ১৯৭৫ সালের আগেই শেখ মুজিব গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেন। সেটাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ফ্যাসিস্টিক পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, “এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন জিয়াউর রহমান। বহুদলীয় রাজনীতি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা—এসব ছিল জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক সংস্কারের অংশ। শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিকভাবেও তিনি সংস্কার করেছিলেন। তৎকালীন ভ্রান্ত অর্থনৈতিক চিন্তাধারার বিপরীতে তিনি নিয়ে আসেন মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারণা। আর সেই সংস্কারের মাধ্যমেই মাত্র সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশ বদলে যায়। যে দেশকে হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’, সেই দেশকেই আমেরিকা ‘সম্ভাবনাময় দেশ’ বলে স্বীকৃতি দেয়।
খালেদা জিয়ার সংস্কারের কথাও তুলে ধরেন ফখরুল। তিনি বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রেসিডেন্সিয়াল শাসনব্যবস্থা থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে আসেন পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রে। এটাই ছিল আরেকটি বড় রাজনৈতিক সংস্কার। আর এর জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা আন্দোলন করেছেন, কারাভোগ করেছেন।
তবে বর্তমান সময়ে যে ‘নতুন ধরনের সংস্কারের চিন্তা’ আসছে, তার প্রতি শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বিশেষ করে প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থা) নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, “এই পিআর ধারণাটা আমাদের দেশের মানুষ বোঝে না। এ নিয়ে আমি বিস্তারিত মন্তব্য করব না, তবে এটুকু বলব, দেশের গণতন্ত্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
সভা শেষে উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা হয় জিয়াউর রহমানের নীতি, বঙ্গবন্ধুর শাসন পদ্ধতি, এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে আমাদের রাজনৈতিক দুর্দশা, স্বৈরতন্ত্রের উত্থান, গণতন্ত্রের সংকট—সব কিছুর শেকড় আমরা ইতিহাসে খুঁজে পাই। এই ইতিহাস ভুললে চলবে না।”
তিনি আরও বলেন, “আজ যারা নিজেকে গণতন্ত্রের রক্ষক বলে প্রচার করছেন, তারাই একসময় বাকশাল কায়েম করে মানুষের কণ্ঠরোধ করেছিল। অথচ বিএনপিই এ দেশে বাস্তব গণতন্ত্রের ধারা চালু করেছিল। তাই আসুন, ইতিহাস জানি, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিই, এবং প্রকৃত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ঐক্যবদ্ধ হই।