সাবেক সেনা কর্মকর্তা অব. কর্নেল হাসিনুর রহমান দাবি করেছেন, শেখ কামালের গুলিবর্ষণের ঘটনাই শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পথ তৈরি করে দেয়। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে বাসায় এত অস্ত্র রাখা হয়েছিল।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান সম্প্রতি এক বিক্ষোভ সমাবেশে ১৫ আগস্টের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন। তাঁর দাবি, শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পেছনে অন্যতম কারণ ছিলেন শেখ কামাল।
হাসিনুর রহমান বলেন, “শেখ মুজিবকে হয়তো তারা গ্রেপ্তার করতে পারত। পরিকল্পনাও ছিল, কিন্তু ভেতর থেকে শেখ কামাল হঠাৎ গুলিবর্ষণ শুরু করে দেন। তাঁর গুলিতে আমাদের চারজন আহত হন—তাদের মধ্যে শামসুদ্দিন নামে একজন মারা যান, আর বাকি তিনজন গুরুতর আহত হন। এরপর পাল্টা হামলা হয়, এবং সেই হামলায় শেখ কামাল নিহত হন। তখন আর অন্যদের জীবিত রাখার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না।”
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “কোন ক্ষমতার জোরে শেখ কামাল বাসায় এত অস্ত্র জমা করেছিলেন? তাঁর বাসায় একাধিক অস্ত্র ছিল—এসএমডি, এসএমসি সহ আরও অনেক কিছু। কীভাবে এসব অস্ত্র বাসায় রাখা সম্ভব হয়েছিল?”
১৫ আগস্টের ঘটনাকে স্মরণ করে হাসিনুর রহমান বলেন, “সেটা ছিল লজ্জাজনক এক অধ্যায়। সেদিন শেখ কামালের গুলিতে যারা নিহত ও আহত হয়েছিলেন, তারা আমাদের দেশের সূর্য সন্তান। তাঁদের স্বীকৃতি না দিলে আজকের বাংলাদেশ এই জায়গায় পৌঁছাতে পারত না।”
তাঁর এ বক্তব্য সমাবেশে উপস্থিতদের মধ্যে তীব্র আলোচনা সৃষ্টি করে। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছেন। অনেকে মনে করছেন, এই বক্তব্য নতুন করে ১৫ আগস্টের ঘটনার পেছনের বাস্তবতা ও বিতর্ককে সামনে নিয়ে আসবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের বক্তব্য ১৫ আগস্টের ইতিহাসে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিতে পারে। তবে সমালোচকরা মনে করছেন, ঘটনাটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে হাসিনুর রহমান হয়তো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মন্তব্য করেছেন।
এ বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা অতীতে বারবার বলেছেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ছিল সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার সঙ্গে শেখ কামালের কোনো ব্যক্তিগত ভূমিকা ছিল না। অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সব সময়ই ১৫ আগস্টের ঘটনা নিয়ে বিকল্প ব্যাখ্যা দিয়ে আসছে।
১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য নিহত হন। ওই ঘটনার পর বাংলাদেশে দীর্ঘদিন সামরিক শাসন চলে এবং দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অন্ধকার অধ্যায় যুক্ত হয়।
আজকের এই বক্তব্যের ফলে ঘটনাটি নিয়ে নতুন করে আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই দাবি নিয়ে মতবিভেদ দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, ইতিহাসের সত্য উন্মোচন জরুরি, আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এটি শুধুই রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরির চেষ্টা।