বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ হাসিনার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। গুম-খুনের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে এবং সর্বোচ্চ শাস্তি তাকে পেতেই হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ হাসিনা আর দায় এড়িয়ে যেতে পারবেন না। আজ প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি এই দেশের গুম, খুন ও নির্যাতনের জন্য সরাসরি দায়ী। তাই তার বিচার বাংলার মাটিতেই হতে হবে এবং তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি পেতেই হবে।
শুক্রবার জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ কর্মসূচির আয়োজন করে ভুক্তভোগী পরিবারের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ছবি ও তথ্য প্রদর্শন করা হয়, যা উপস্থিত সবাইকে নাড়া দেয়।
ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গুম কমিশনের কার্যক্রম প্রকাশ্যে আনা এবং পাবলিক শুনানি আয়োজন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর মা-বাবা, ভাইবোনেরা এখনও প্রতিদিন কাঁদছেন, ন্যায়বিচারের জন্য আর্তনাদ করছেন। অথচ সরকার তাদের সেই কান্না থামাতে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। জনগণের কাছে অবশ্যই এ বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আমরা এই দেশের প্রতিটি নিপীড়িত মানুষের পাশে আছি। বিএনপির নেতাকর্মীরা বছরের পর বছর মিথ্যা মামলায় কারাগারে থেকেছেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বাধ্য করা হয়েছে নির্বাসনে যেতে। এমন কোনো নেতা নেই, যিনি হয়রানি ও মিথ্যা মামলার শিকার হননি। তাই এটা কেউ ভাববেন না যে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে এসব বিচার এড়িয়ে যাবে। নির্বাচনের মাধ্যমেই আমরা গুম-খুনের বিচার শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাব।
তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, আমাদের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল— গুম ও হত্যার বিচার নিশ্চিত করা। বিএনপি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, গুমের শিকার প্রতিটি শিশুর পাশে তারা থাকবে। যতদিন পর্যন্ত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। প্রতিটি ভুক্তভোগী পরিবারের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সরকারকে প্রকাশ করতে হবে।
গুমের শিকার পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। জনগণের আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয় না। বাংলাদেশের ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে যে, আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে ক্ষমতা থেকে সরানো সম্ভব। যারা আজ পিতা, ভাই বা সন্তান হারিয়েছেন, তারা একদিন ন্যায়বিচার পাবেন— আমরা সে বিশ্বাস নিয়ে এগোচ্ছি।
সভায় উপস্থিত ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা আবেগাপ্লুত হয়ে বক্তব্য রাখেন। তারা জানান, বছরের পর বছর ধরে প্রিয়জনদের খুঁজে না পেয়ে তারা মানসিক ও সামাজিকভাবে বিধ্বস্ত। তবুও তারা আশা ছাড়েননি। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, জনগণের আন্দোলনই একদিন এই ন্যায়বিচার এনে দেবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি এবার গুম-খুনের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে চায়। আন্তর্জাতিক মহলেও এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এ ধরণের অপরাধ কখনো চাপা থাকে না— একদিন না একদিন সত্য প্রকাশ হবেই।
মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে গুম-খুন এখন আরও জোরালো ইস্যু হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিএনপি বিশ্বাস করে, জনগণের শক্তির কাছে কোনো অন্যায় টিকতে পারে না, এবং একদিন এই বিচার বাংলার মাটিতেই হবে।