বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শেখ হাসিনা যেভাবে চান, পিআর পদ্ধতিও অনেকটা সেই রকম সাজানো নাটক। তিনি দাবি করেন, জনগণ কোনোদিন এই প্রক্রিয়াকে মেনে নেবে না।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বর্তমান সময়ের আলোচিত পিআর পদ্ধতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ধরনের রাজনৈতিক সমাধান চান, পিআর পদ্ধতি অনেকটাই তার প্রতিচ্ছবি।
শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের লোকনাথ দিঘির মাঠে বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। রিজভী প্রশ্ন তোলেন, “হঠাৎ করে কিছু রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতির কথা বলছে। কিন্তু এই পিআর পদ্ধতি আসলে কী? কোনো সাধারণ মানুষ কি বলতে পারবে? এটা কি নারকেল তেলের মতো মাথায় মাখে, না কি সাবানের মতো শরীরে দেয়?”
তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “শেখ হাসিনা যেটা চান, পিআর পদ্ধতি তেমনই সাজানো নাটক। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে কোনো প্রহসনমূলক পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচন চাপিয়ে দেওয়া হলে জনগণ কখনো তা মেনে নেবে না।”
রিজভী আরও বলেন, “পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের কোনো দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে নেই। সাধারণ মানুষ চায় তাদের ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোক। বিএনপিও তাই বিশ্বাস করে। আমরা চাই জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকার আসুক। এরপর সেই সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “কিছু মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে। জনগণের জানার অধিকার আছে কেন এই বিলম্ব ঘটানো হচ্ছে। আমরা কিন্তু সবকিছু খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি।”
বিএনপির এই নেতা আওয়ামী লীগের অতীত কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলেন, “যারা ক্ষমতায় থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে, যারা টেন্ডারবাজি করেছে, অন্যের জমি দখল করেছে, যারা ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে—তাদের যেন আবার রাজনীতির মূল স্রোতে স্থান না দেওয়া হয়। এ বিষয়ে বিএনপিকে কঠোর নজরদারিতে থাকতে হবে।”
শেখ হাসিনাকে সরাসরি আক্রমণ করে রিজভী বলেন, “তিনি ছিলেন শকুনির মতো এক শাসক। তার শাসনামলে মানুষের রক্ত ঝরেছে। অনেক শিশু ও তরুণকে হত্যা করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাকেও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে।”
তিনি দাবি করেন, বিএনপির লক্ষ্য হলো একটি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন করা। “আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারবে, ভয়ের পরিবেশে নয়। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে আমরা দেশকে নতুন করে বিনির্মাণ করতে চাই।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকনাথ দিঘীর পাড়ে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি প্রকৌশলী খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল। সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া।
সমাবেশস্থলে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। তারা স্লোগানে স্লোগানে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থায় পরিবর্তনের দাবি তুলে ধরেন।
রিজভীর বক্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম নিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, পিআর পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে, সমালোচকরা বলছেন, এটি আবারও প্রমাণ করে যে আসন্ন নির্বাচনের আগে ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের রাজনৈতিক সংঘাত তৈরি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।