শারিরীক প্রতিবন্ধী লাইজুর সফলতার গল্প

Md Babul Hossain avatar   
Md Babul Hossain
****

পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ 


শারীরিক প্রতিবন্ধীকতা দমিয়ে রাখতে পারেনি চলৎ শক্তিহীন বিকলাঙ্গ পা নিয়ে জন্ম নেয়া  লাইজুর জীবন সংগ্রামকে । বিকলাঙ্গ পা নিয়ে জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়া লাইজু নিজেই একটা গল্প-কাহিনী । বিকলাঙ্গ পা বিশিষ্ট এ গল্পের নায়িকা  লাইজুর  জন্ম  গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী  উপজেলায়। বাবার বাড়িতে অবহেলা অনাদরে দূর্বিষহ জীবন নিয়ে বড় হতে থাকা কিশোরী লাইলীকে আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বিয়ে করে একই এলাকার সাইকেল মেকার কোনা মিয়া নামক বিপত্নীক এক ব্যক্তি। মুলত কোনা মিয়ার মৃত স্ত্রীর  রেখে যাওয়া ৪ শিশু সন্তানকে  দেখভালের জন্য বিয়ে করে প্রতিবন্ধী লাইজুকে। এমনিতেই প্রতিবন্ধী তার উপর স্বামীর আগের স্ত্রীর রেখে যাওয়া ৪ শিশু সন্তানদেরকে লালন পালন  করা তার জন্য যেন  মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ। এ অবস্থায় জীবিকার তাগিদে ৯০ দশকের শেষ ভাগে তারা জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার  সীমান্তবর্তী বাগজানার  চেঁচড়া চৌমুহনী মোড়ের বাজারে  বেইলী ব্রীজের পশ্চিমে রাস্তার ধারে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে  বসবাস শুরু করে।  এখানে এসে কোনা সাইকেল মেরামতের কাজ করতে থাকে । কিস্তুু তার সামান্য আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে থাকে তারা। এমন অবস্থায় লাইলীও  প্রতিবন্ধকতাকে উপক্ষা করে  সংসারের আয় বাড়াতে কাজে নেমে পড়েন।  হাঁটাচলা করতে না পারা লাইজু অবৈধ হলেও জীবন বাঁচার স্বার্থে সীমাস্ত এলাকা থেকে রিক্সা ভ্যানে করে লবণ, চিনি, কসমেটিকস, শাড়ী ও ছিট  কাপড় পাঁচবিবি বাজার সহ জয়পুরহাট শহরে বিক্রি করতে থাকে । এর মধ্যেই  লাইজুর গর্ভে  জন্ম নেয় ২ সন্তান । অনেক ঘাত প্রতিঘাত  পেরিয়ে এমন সংগ্রামী জীবন নিয়ে অতি কষ্টে দিন পার হতে থাকে তাদের । দিনের পরিক্রমায়  সন্তানদেরকে  লালন-পালন  করে বড় করে  প্রায় সবাইকে  বিয়েও  দেয় । এ অবস্থায় গত ১৬ সালে স্বামী কোনা মিয়া মারা যায়। এতে করে লাইলী দিশেহারা হয়ে পড়লেও হাল ছাড়েনি। স্বামী মারা যাওয়ার পর তার নিজের ছোট মেয়ের বিয়ে দিতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাকে। তারপরও জীবন থেমে যায়নি লাইজুর।আকাশসম প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে স্বামীর সামান্য সঞ্চিত অর্থ আর নিজের  ব্যবসার টাকা দিয়ে কেনা কয়েক শতক জমি ছিল তার। সেই জমি আপন পর না করে সকল  সন্তানদের মাঝে সমান ভাগে ভাগ করে দিয়েছে লাইজু। তবে বয়স হয়ে গেলও এখনো বসে থাকেনা লাইজু। সন্তানদের সংসারে বোঝা হয়ে না থেকে শেষ বয়সেও অটল মন নিয়ে আটাপাড়া বেলী ব্রীজের নীচে ছোট্ট একটা টঙ্গের দোকান দিয়ে হার না মানা পণ করে ব্যবসা চালাচ্ছে সে এখনো। তার হাটা চলার কষ্ট দেকে কিছুদিন আগে তার চলাচলের জন্য স্থানীয় এক ব্যক্তি তাকে একটা হুইল চেয়ার যোগার করে দিয়েছেন। বর্তমানে সতীনের ছেলের ঘরেই সে বসবাস করছে সে। তবে শারিরিক প্রতিবন্ধি হলেও সতীনের সন্তানরা তাকে নিজের মায়ের মতই আদর স্নেহ করে। সন্তানদের এমন ভালবাসায় অতীত দূর্বিসহ জীবনের কথা ভূলেই গেছেন।

Комментариев нет


News Card Generator