জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আবারও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে—‘শাপলা ছাড়া কোনো নিবন্ধন নয়।’ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে আড়াই ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে এই ঘোষণা দেন দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
নিবন্ধন যদি আমাদের দিতে হয় সেটা শাপলা দিয়েই হবে। শাপলা ছাড়া এনসিপির নিবন্ধন হবে না, এবং এনসিপিও শাপলা ছাড়া নিবন্ধন মানবে না।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর অভিযোগ, এনসিপিকে শাপলা প্রতীক না দেওয়ার পেছনে “অদৃশ্য শক্তির” প্রভাব রয়েছে। তার ভাষায়, “আমরা কোনো আইনি প্রতিবন্ধকতা দেখি নাই। প্রতিবন্ধকতা অন্য জায়গা থেকে আসছে। কারো অদৃশ্য শক্তির ইঙ্গিত আমরা পেয়েছি।”
তিনি বলেন, বৈঠকে প্রথম আধাঘণ্টা ভোটার নিবন্ধন, প্রবাসী ভোটার ও তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা হয়। তবে বাকি দুই ঘণ্টা ধরে তারা নির্বাচন কমিশনের কাছে একটাই প্রশ্ন রেখেছেন—শাপলা প্রতীক দিতে আপত্তি কেন? “কিন্তু তারা কোনো উত্তর দিতে পারেননি,” দাবি করেন তিনি।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, “আমরা তাদের পরিষ্কার জানিয়ে এসেছি—যদি শাপলা না দেন, তাহলে ব্যাখ্যা দিতে হবে কেন দেননি। আমরা আশা করি, ইসি যুক্তিসংগতভাবে সিদ্ধান্ত নেবে।
এনসিপি নেতা আরও জানান, তারা চান না কোনো দলের প্রতীক বাতিল হোক, তবে শাপলা প্রতীক আটকে রাখার মাধ্যমে যদি কারো প্রতীক রক্ষা করা হয়, তাহলে সেটি বৈষম্যমূলক হবে। তিনি বলেন, “যদি শাপলা না দেন, তবে ধানের শীষ, তারা, সোনালি আঁশ—সব প্রতীকই বাতিল করতে হবে। আমরা চাই সবাই সমান সুযোগ পাক।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “শাপলা প্রতীক আমাদের পরিচয়, আমাদের আন্দোলনের প্রতীক। আইনি কিংবা রাজনৈতিকভাবে কোনো বাধা নেই। তাহলে সমস্যা কোথায়? আমরা ইসিকে বলেছি—যদি কোনো চাপ থেকে থাকে, সেটা আমাদের জানাতে পারেন। আমরা সেই শক্তির বিরুদ্ধেই লড়ব, ইসির বিরুদ্ধে নয়।
এই মাসের মধ্যেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। যদি কোনো ষড়যন্ত্র থেকে থাকে, সেটা জাতির সামনে প্রকাশ পাবে। আমরা শাপলা প্রতীক পেতে আশাবাদী এবং এই দাবিতে শেষ পর্যন্ত গণতান্ত্রিকভাবে লড়াই চালিয়ে যাব।
বৈঠক শেষে দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, “ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ভোটার নিবন্ধন চলবে। কিন্তু তরুণ ও প্রবাসী ভোটারদের কথা ভেবে আমরা নির্বাচন পর্যন্ত ভোটার নিবন্ধনের সুযোগ রাখার দাবি জানিয়েছি।
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, “প্রবাসীরা ভোট দিতে মুখিয়ে আছেন। অথচ প্রবাসী ভোটারদের জন্য অ্যাপ চালু হতে দেরি হচ্ছে। আমরা জানতে চেয়েছি কেন এমন বিলম্ব হচ্ছে। আমাদের আশঙ্কা, ইসি যে পথে এগোচ্ছে, সেখানে অনেক প্রবাসী ভোটার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
কমিশন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে অক্টোবর মাসের মধ্যেই অ্যাপটি চালু করা হবে।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “প্রতীকের প্রশ্নে নির্বাচন থামবে না, কিন্তু প্রতীকের মাধ্যমে যদি আমাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, সেটা মেনে নেওয়া হবে না। এনসিপির নিবন্ধন শাপলা প্রতীকের মাধ্যমেই হবে—এটাই আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।