সত্যজিৎ দাস:
ফেসবুকে একটি পোস্ট। আর সেটিই হয়ে উঠল এক নিখোঁজ বৃদ্ধার ঘরে ফেরার সেতু। কুলাউড়ার খইতরুন্নেছা নামের মানসিক ভারসাম্যহীন নারী পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন। একপর্যায়ে তিনি গিয়ে পৌঁছান মাদারীপুরের টেকেরহাটে। সেখানেই তাঁকে দেখতে পান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য সৈয়দ কামরুল ইসলাম। তাঁর সহানুভূতিশীল উদ্যোগেই শেষ পর্যন্ত পরিবার ফিরে পেল হারিয়ে যাওয়া আপনজনকে।
খইতরুন্নেছা আশ্রয় নেন টেকেরহাট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে,যেখানে সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে। কলেজের বারান্দায় ভেজা অবস্থায় বসে থাকতে দেখে সৈনিক কামরুল তাঁর খোঁজ- খবর নেন,খাবার দেন এবং পরিচয় জানার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন,“মনে হচ্ছিল,নারীটি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি সিলেটের দিকের কথা বলছিলেন,রেলস্টেশনের খোঁজ নিচ্ছিলেন। তখনই আমি তাঁর ছবি ও তথ্য ফেসবুকে পোস্ট করি।”
সেই পোস্ট দেখেই কুলাউড়ার বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জানান,ছবির নারীটি তাঁর দাদি খইতরুন্নেছা। বিষয়টি কামরুল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে তাঁকে তিন দিনের ছুটি দেওয়া হয় বৃদ্ধাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
বুধবার রাতেই সৈনিক কামরুল ইসলাম খইতরুন্নেছাকে নিয়ে রওনা দেন কুলাউড়ার পথে। শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেলে তাঁরা পৌঁছান কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের কর্মধা গ্রামে। সেখানে খইতরুন্নেছাকে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন; কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হেলাল আহমদ ও কুলাউড়া থানার পুলিশ সদস্যরা।
খইতরুন্নেছার পরিবার জানায়,তিনি প্রায়ই কাউকে কিছু না বলেই আত্মীয়দের বাড়িতে চলে যান। সাধারণত কয়েক দিন পর ফিরে আসেন। তবে এবার ছয় দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও না ফেরায় পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।
সৈনিক কামরুল বলেন,“এই নারী আমাদের ক্যাম্পে না এলেই হয়তো কেউ খুঁজে পেত না। আমি শুধু যা করণীয়,তা-ই করেছি। পরিবারের কাছে নিরাপদে পৌঁছে দিতে পেরে ভালো লাগছে।”
কর্মধা ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হেলাল আহমদ বলেন,“সৈনিক কামরুল যদি এগিয়ে না আসতেন, তাহলে হয়তো এই বৃদ্ধা কখনোই ঘরে ফিরতে পারতেন না। এমন মানবিক কাজের জন্য তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ।”