স্বপ্নভঙ্গের ৫ আগস্ট: দেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, তা আজও পূরণ হয়নি”— সারজিস আলম..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
At a rally in Rajshahi, NCP leader Sarzis Alam expressed disappointment that the dream envisioned on August 5 remains unfulfilled. He declared that the fight would continue until every drop of martyrs..

রাজশাহীতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে সারজিস আলম আক্ষেপ করে বলেন, ৫ আগস্ট যে স্বপ্ন তারা দেখেছিলেন, তা আজও অপূর্ণ। তিনি জানান, শহীদদের রক্তের দামে দেখা সেই স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এনসিপির লড়াই চলবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ৫ আগস্ট আমরা যে স্বপ্ন দেখেছিলাম—একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ের বাংলাদেশ—তা আজও বাস্তব হয়নি।
তিনি বলেন, “২০২৪-এর জুলাইয়ের পরে আরেকটি নতুন জুলাই এসেছে। সময় পেরিয়ে গেছে, কিন্তু আমাদের ভেতরের আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন আর প্রত্যাশা এখনও পূরণ হয়নি। এখনও সেই ব্যথা রয়ে গেছে মনের মধ্যে। আমরা শহীদদের রক্তের মূল্য ভুলে যেতে পারি না।

এই বক্তব্য তিনি দেন গতকাল, ৬ জুলাই (রবিবার) সন্ধ্যায় রাজশাহীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে আয়োজিত এক সমাবেশে। এটি ছিল জুলাই মাসব্যাপী এনসিপির পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতৃবৃন্দ।

সারজিস আলম বলেন, “এই দেশের শহীদরা, যারা প্রাণ দিয়েছেন আমাদের আন্দোলনের জন্য, তারা আমাদের ওপর একটা দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। তাদের সেই ত্যাগের প্রতি আমরা যদি অনুগত না থাকি, তবে তা হবে চরম বিশ্বাসঘাতকতা। এই কারণেই আমরা বলছি—যতদিন না আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করছি, ততদিন এনসিপির ‘জুলাই আন্দোলন’ চলবে। দেশের ৬৪টি জেলায় আমরা মানুষের কাছে যাচ্ছি, তাদের সঙ্গে কথা বলছি, তাদের সাথে ঐক্য গড়ে তুলছি।

তিনি তীব্রভাবে আওয়ামী লীগের শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করেন। বলেন, “এ দেশে শেখ হাসিনার নাম নিলেই শত্রু বানিয়ে ফেলা হয়। আপনি যাকে খুশি সমালোচনা করতে পারেন, কিন্তু শেখ হাসিনার নাম নিলেই মনে করা হয় আপনি দেশদ্রোহী। এই মানসিকতা থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। শেখ হাসিনা আজ ফেরেশতার চেয়েও উপরে—এটাই স্বৈরাচারের মূল লক্ষণ।

প্রশাসনের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি—আপনারা যদি সত্যিকার অর্থে জনগণের সেবক হন, তাহলে সম্মান পাবেন। কিন্তু যদি দলের দালাল হয়ে যান, তাহলে আপনাদের পরিণতিও আওয়ামী লীগের মতো হবে। ভবিষ্যতের বাংলাদেশে চাটুকারদের আর কোনো জায়গা থাকবে না।

উত্তরাঞ্চলের দীর্ঘদিনের অবহেলা নিয়েও বক্তব্য দেন সারজিস। বলেন, “এই অঞ্চলের মানুষ বছরের পর বছর বৈষম্যের শিকার। কোনো সরকারই আমাদের প্রতি সুবিচার করেনি। এনসিপি যদি ক্ষমতায়ও আসে, আমাদের দাবি স্পষ্ট—উত্তরাঞ্চলের প্রতি বৈষম্য চলবে না। চাঁদাবাজ হোক, দখলবাজ হোক কিংবা সিন্ডিকেট—যে-ই হোক, তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নইলে আরেকজন হাসিনার জন্ম হবে এই মাটিতে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। কিন্তু সেই গণতন্ত্র হতে হবে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়, জবাবদিহিতার ভিতরে। যে নেতা যতই জনপ্রিয় হোক, তাকে প্রশ্ন করা যাবে। আর সেই প্রশ্নের উত্তর যদি সন্তোষজনক না হয়, তাহলে জনগণের রায়ই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সদস্যসচিব আখতার হোসাইন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা।

তাদের বক্তব্যে একটাই বার্তা—বাংলাদেশের রাজনীতিতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে এনসিপির মতো বিকল্প শক্তিকে সামনে আনতেই হবে। এবং এজন্য রাজপথে থাকতে হবে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।

没有找到评论