close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার কাঁধে হাত রেখে চলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক..

Akram Hossen avatar   
Akram Hossen
সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা, বর্তমান বিএনপি নেতার আত্মীয় এবং দুটি হত্যা মামলার আসামি মো. আব্দুর রহিমকে ঘিরে বিতর্কের ঝড় উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।..

নোয়াখালী জেলা এবং ঢাকার সাভারে তার উপস্থিতি, রাজনৈতিক পরিচয় পরিবর্তন, এবং বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে তার ভাইরাল হওয়া ছবিগুলো সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।

সূত্র মতে, মো. আব্দুর রহিম বর্তমানে বিএনপির অঙ্গসংগঠন পৌর শ্রমিক দলের সহ-সভাপতি। অথচ কিছুদিন আগেও তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নোয়াখালী জেলা শাখার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাভার পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি। এসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকাকালেই তার বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলার অভিযোগ ওঠে। মামলাগুলোর নম্বর যথাক্রমে—সাভার মডেল থানায় ৬ ও ২৯।

গত ১৯ এপ্রিল সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাঁচটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায় মো. আব্দুর রহিম নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর আলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভঙ্গিতে ছবি তুলছেন। একাধিক ছবিতে দুজনকে ফুল দিয়ে পরস্পরকে বরণ করতে দেখা যায়, আবার কোনো ছবিতে একে অপরের কাঁধে হাত রেখে হাঁটতে দেখা গেছে। এমনকি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারেও দুজনকে একসঙ্গে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়।

ছবিগুলো ভাইরাল হওয়ার পর সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। একপক্ষ বলছে, "আওয়ামী লীগের ছায়া থেকে উঠে এসে বিএনপির ঘরে ঢুকে পর্দার আড়ালে কি কোনো সমঝোতা চলছে?" অন্যদিকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ—উভয় পক্ষেই রহিমের সংশ্লিষ্টতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর আলো জানান, “আব্দুর রহিম আমার আত্মীয়। সে আমার চাচাতো ভাইয়ের শ্যালক। আমি জানি সে বিএনপির কর্মী, তবে তার সাভারে কি ভূমিকা তা আমার জানা নেই। অনেকেই আসে, ছবি তোলে। সবকিছু রাজনীতির রঙে দেখলে হবে না।”

তবে আলোর এই বক্তব্য রহিমের অতীত পরিচয় এবং মামলার নথির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই মনে করছেন অনেকেই। কারণ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীবদের সঙ্গে রহিমের তোলা বহু ছবিও রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এমনকি, আওয়ামী লীগের ব্যানারে তার ছবি যুক্ত পোস্টার-ফেস্টুনও সাভারে দেখা গেছে।

আব্দুর রহিম বর্তমানে একটি অন্ধ কল্যাণ সমিতিতে কর্মরত বলেও দাবি করেছেন বিএনপি নেতা আলো। অথচ তার বিরুদ্ধে সাভারে দুটি হত্যা মামলার অভিযোগ এখনো বহাল রয়েছে। এসব মামলার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রহিম সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আব্দুর রহিম একজন তালিকাভুক্ত আসামি। তার রাজনৈতিক পরিচয় পরিবর্তনের পেছনে প্রভাবশালী মহলের হাত থাকার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।”

এই ঘটনার পর সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন—আব্দুর রহিম কি আদৌ কোনো দলের আদর্শে বিশ্বাসী, না কি সুবিধাভোগী রাজনৈতিক ব্যবসায়ী? একজন ব্যক্তি কীভাবে একই সময়ে দুই বিপরীত মতাদর্শের দলে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন, তাও আবার হত্যা মামলার আসামি হয়ে?

নোয়াখালীর একজন জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “এটি রাজনৈতিক দুর্নীতির একটি উদাহরণ। যেভাবে দলীয় পরিচয় দিয়ে মামলা হালকা করার চেষ্টা হয়, তা দেশের আইন ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।”

আব্দুর রহিমকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত বিতর্ক আবারও প্রমাণ করলো—বাংলাদেশের রাজনীতিতে আদর্শ নয়, বরং ক্ষমতার ঘনিষ্ঠতা ও সুবিধাবাদ বড় হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বিতর্কিত ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠতা যে কতটা বিস্ময়কর হতে পারে, রহিম তার এক জ্বলন্ত উদাহরণ।

Nessun commento trovato


News Card Generator